জিম্বাবুয়ে কি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুশি করতে শুল্ক কমাচ্ছে? শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে জল্পনা।
আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি প্রচেষ্টা চলছে বলে মনে হচ্ছে। সম্প্রতি, জিম্বাবুয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা পণ্যের ওপর শুল্ক সম্পূর্ণভাবে তুলে নিয়েছে। একইসঙ্গে, বিতর্কিত ভূমি সংস্কারের সময় জমি হারানো শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিতে শুরু করেছে দেশটি। এই পদক্ষেপগুলো এমন এক সময়ে নেওয়া হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জিম্বাবুয়ের এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে অনেকে মনে করছেন, দেশটি সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের মন জয় করতে চাইছে। এর মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় এবং দেশটির উপর থেকে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রায়ই অভিযোগ করেন যে, আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে।
জিম্বাবুয়ের অর্থনীতি গত দুই দশক ধরে বেশ কঠিন সময় পার করছে। মুদ্রাস্ফীতি, কর্মসংস্থান হ্রাস এবং বিভিন্ন ধরনের মুদ্রার প্রচলন – এসব কারণে দেশটির অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর্তৃক আরোপিত শুল্কের কারণে অনেক দেশ এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, লেসোথো’র মতো দেশ, যাদের পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে শুল্ক কমানোর চেষ্টা করছে।
জিম্বাবুয়ে মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে ইস্পাত, তামাক এবং চিনি রপ্তানি করে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশটি যন্ত্রপাতি, ওষুধ এবং কৃষিজাত পণ্য আমদানি করে। যদিও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সীমিত, তবে ২০২৩ সালে প্রায় ১১১.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। এর মধ্যে, জিম্বাবুয়ে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ছিল ৬৭.৮ মিলিয়ন ডলার, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৩.৮ মিলিয়ন ডলার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জিম্বাবুয়ের এই পদক্ষেপ দেশটির অর্থনীতির জন্য ভালো ফল নাও আনতে পারে। তাদের আশঙ্কা, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য জিম্বাবুয়েতে সয়লাব হতে পারে এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এর ফলে উৎপাদন কমে যেতে পারে, বাড়তে পারে বেকারত্ব এবং রাজস্ব আয়ও হ্রাস পেতে পারে।
এদিকে, জিম্বাবুয়ের এই সিদ্ধান্তের কারণে দেশটির প্রধান বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। তারা প্রশ্ন করতে পারে, কেন তাদের পণ্যগুলোর ওপর শুল্ক দিতে হবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক নেই।
জিম্বাবুয়ের সরকার সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, ২০০০ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের ভূমি সংস্কার কর্মসূচির সময় জমি হারানো শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিতরণ করা হবে। এই ক্ষতিপূরণ বিতরণের ফলে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন যে, এই অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে না দিয়ে যারা সুবিধাভোগী, তাদের সরাসরি পরিশোধ করা উচিত ছিল।
জিম্বাবুয়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে বেশ জটিল। ক্ষমতাসীন দল জানু-পিএফ-এর মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে লড়াই চলছে। প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়া, যিনি ২০১৭ সালে গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, তিনি দলের অভ্যন্তরে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে পদত্যাগ করার চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জিম্বাবুয়ের সরকার আশা করছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক কমানোর ফলে দেশটির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা हटতে পারে এবং বিদেশি বিনিয়োগের পথ খুলতে পারে। তবে, কেউ কেউ মনে করেন, এই পদক্ষেপ মূলত দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের স্বার্থ রক্ষা করতে সহায়ক হবে।
আফ্রিকার এই দেশটির সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, জিম্বাবুয়ে হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের মন জয় করে অর্থনৈতিক সুবিধা পেতে চাইছে। তবে, এর ফল কি হবে, তা সময়ই বলবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা