গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধ করে সেখানকার মানুষকে অনাহারে রাখার জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছে হামাস। ফিলিস্তিনের এই অঞ্চলের শাসকগোষ্ঠী বলছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজাবাসীর খাদ্য, পানি ও জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ করে যুদ্ধাপরাধ করছে।

হামাসের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ এমন এক সময়ে আনা হলো, যখন জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা গাজায় তীব্র খাদ্যসংকট এবং অপুষ্টির শিকার হওয়া শিশুদের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্কবার্তা জারি করেছে।

গত বুধবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গাজায় ত্রাণ সরবরাহের ওপর অবরোধের কথা উল্লেখ করে এটিকে হামাসের বিরুদ্ধে ‘চাপ প্রয়োগের প্রধান হাতিয়ার’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তাঁর এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে হামাস একে ‘যুদ্ধাপরাধের শামিল’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েল ‘সাত সপ্তাহ ধরে’ গাজার নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের খাদ্য, ঔষধ, পানি এবং জ্বালানি সরবরাহ থেকে বঞ্চিত করছে। হামাস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি গাজায় চলমান অবরোধ ও সেখানকার বাসিন্দাদের অনাহার থেকে রক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো গাজায় মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে প্রায় ৩,৬৯৬ জন শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

যা ফেব্রুয়ারির তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি। মানবিক ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ থাকার কারণে গাজায় খাদ্য সংকট মারাত্মক রূপ নিয়েছে।

এর আগে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (International Court of Justice – ICJ) ইসরায়েলকে গাজায় খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও চিকিৎসা সামগ্রীসহ জরুরি ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিল।

তবে ইসরায়েল সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে আসছে। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, হামাস ত্রাণ সামগ্রী অপব্যবহার করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কান ব্রডকাস্টারের মতে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বিভাগের ধারণা, গাজায় মজুদ খাদ্য এক মাসের মধ্যে ফুরিয়ে যেতে পারে।

সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার একজন প্রতিবেদক জানিয়েছেন, জাতিসংঘের একাধিক সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েল চাইছে ত্রাণ বিতরণের আগে কারা সাহায্য পাবে, তা তাদের অনুমোদন নিতে হবে।

জাতিসংঘ এই ধরনের পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে। আন্তর্জাতিক মহলের আশঙ্কা, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ গাজার মানবিক সংকটকে আরও গভীর করে তুলবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা