গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১০ জন নিহত, খাদ্য সংকট নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় আবারও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাতের হামলায় একটি পরিবারের ১০ জনসহ অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
একইসঙ্গে, অবরুদ্ধ গাজায় খাদ্য ও অন্যান্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে ভয়াবহ মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে খবর পাওয়া যাচ্ছে, দেইর আল-বালাহ শহরে চালানো হামলায় একটি পরিবারের ১০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া, খান ইউনিসে চালানো হামলায় একই পরিবারের ৫ শিশু, ৪ নারী এবং ১ জন পুরুষ নিহত হয়েছে।
আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর।
সংবাদ সংস্থা এপির তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বেসামরিক লোকজনের ক্ষতি এড়ানোর চেষ্টা করে এবং হামাসের কার্যক্রমের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে।
তবে, সর্বশেষ হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সংস্থা (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, বর্তমানে গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষের মধ্যে অধিকাংশই খাদ্যের জন্য সাহায্য শিবিরের ওপর নির্ভরশীল।
বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা প্রতিদিন সেখানে ১০ লাখ মানুষের জন্য খাবার প্রস্তুত করে। খাদ্য সরবরাহের অভাবে অন্যান্য খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে।
জাতিসংঘের পাশাপাশি অন্যান্য সাহায্য সংস্থা তাদের অবশিষ্ট খাদ্য মজুদ ত্রাণ শিবিরে পাঠাচ্ছে।
গাজায় খাদ্য সংগ্রহের আরেকটি উপায় হলো বাজার থেকে কেনা।
কিন্তু বাজারে খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্য এবং তীব্র সংকটের কারণে অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই তা সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির এপ্রিল মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজার বাজারে মানবিক সহায়তা বর্তমানে ৮০ শতাংশ মানুষের প্রধান খাদ্য উৎস।
ওসিএইচএ বলছে, “২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে চলমান সংঘাতের কারণে গাজা উপত্যকা সম্ভবত সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যে পড়েছে।” নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের মুখপাত্র শাইনা লো জানিয়েছেন, বর্তমানে গাজাবাসীর অধিকাংশ মানুষ দিনে মাত্র একবার খাবার খাচ্ছে, যা তাদের প্রয়োজনীয়তার তুলনায় অনেক কম।
পানি সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
সেখানকার বাসিন্দারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রাক থেকে পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্থানীয় পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা ওমর শাতাত জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রত্যেক ব্যক্তি প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ লিটার পানি পাচ্ছেন, যা জাতিসংঘের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অনেক কম।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বুধবার বলেছেন, হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
ইসরায়েল অভিযোগ করে আসছে, হামাস সহায়তা সরিয়ে নিজেদের শাসন টিকিয়ে রাখছে।
ইসরায়েল চাইছে, নতুন করে কোনো যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিক।
একইসঙ্গে, তারা অস্ত্র সমর্পণ করে গাজা ত্যাগ করুক।
গ্যালান্ট জানিয়েছেন, এরপরও ইসরায়েল গাজার ভেতরে “নিরাপত্তা অঞ্চল” হিসেবে বিশাল এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
বর্তমানে হামাসের হাতে ৫৯ জন জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হামাস জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিনিময়ে তারা জিম্মিদের মুক্তি দেবে।
গাজা স্যুপ কিচেনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হানি আলমাধুন জানিয়েছেন, তাদের কাছে আর মাত্র তিন সপ্তাহের মতো খাবার মজুদ আছে।
তিনি বলেন, “খাবার বলতে মূলত আমাদের কাছে পাস্তা ও চাল রয়েছে, এছাড়া কিছুই নেই। কোনো তাজা সবজি নেই, মাংসও নেই।
শুধুমাত্র টিনের মাংস রয়েছে।” তিনি আরও জানান, তাদের খাদ্য সহায়তা নিতে আসা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ খাবার না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস-এর চালানো হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক।
এরপর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫১,০০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা প্রায় ২০,০০০ জঙ্গি নিধন করেছে, তবে এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি।
যুদ্ধ গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস করে দিয়েছে এবং খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং তারা উদ্বাস্তু শিবিরে বা বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।