সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান আল সৌদ সম্প্রতি তেহরান সফর করেছেন, যা কয়েক দশক পর দেশ দুইটির মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক। এই সফর মধ্যপ্রাচ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে একসময় চরম বৈরী সম্পর্ক ছিল, সেখানে এখন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চলছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করা, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি এবং সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। ইরানের সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ এই খবর জানায়।

দীর্ঘদিন পর কোনো সৌদি রাজপরিবারের সদস্যের ইরান সফর এটি। এর আগে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির শাসনামলে বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ তেহরান সফর করেছিলেন। প্রিন্স খালিদ সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের পুত্র।

এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে নতুন একটি পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, উভয় দেশই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার হুমকি দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইরানের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, তাদের ভূখণ্ডে কোনো ধরনের হামলা হলে তা বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।

২০১৬ সালে শিয়া মুসলিম নেতাকে সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর ইরানি বিক্ষোভকারীরা তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলা চালায়, যার জেরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর দেশ দুটি প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ইয়েমেনে প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে পরে। ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের গুরুত্বপূর্ণ তেল স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

তবে দুই বছর আগে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। চীন মধ্যস্থতা করার পর দুই দেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করে।

সৌদি আরবসহ অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলো ইরান, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা আশঙ্কা করছে, ইরানের ওপর ইসরায়েলের কোনো সামরিক পদক্ষেপের ফলে পুরো অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। গত বছর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার পর উপসাগরীয় দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে জানায়, তারা ইসরায়েলকে ইরানের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দেবে না।

গত অক্টোবর মাসে সৌদি আরব ও ইরান প্রথমবারের মতো ওমান উপসাগরে যৌথ নৌ মহড়া চালায়। নভেম্বরে সৌদি আরবের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ ফায়াদ আল-রুয়াইলি তেহরান সফর করেন এবং তাঁর ইরানি সমকক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন