# লাজুক স্বভাব থেকে তারকা খ্যাতি: ওবংজেয়ারের সঙ্গীত যাত্রা
ছোটবেলার লাজুক স্বভাব থেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি – নাইজেরীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ শিল্পী ওবংজেয়ারের সঙ্গীত জীবনের গল্পটা এমনই। সম্প্রতি মুক্তি পেতে যাওয়া তাঁর দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘প্যারাডাইজ নাও’ নিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি।
ওবংজেয়ার, যাঁর আসল নাম স্টিভেন উমো, শৈশবে নাইজেরিয়ার ক্যালবারে বড় হয়েছেন। সেই সময় গান গাওয়ার স্বপ্ন দেখাটা তাঁর কাছে ছিল এক ভিন্ন জগৎ। বন্ধুদের সামনে গান গাইতে লজ্জা পেতেন তিনি। তবে তাঁর শিল্পী হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেন তাঁর ঠাকুরমা। মায়ের উৎসাহের অভাবে তিনিই ছিলেন ওবংজেয়ারের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
“ছোটবেলায় আমি খুব লাজুক ছিলাম,” – নিজের অতীতের কথা বলতে গিয়ে জানান ওবংজেয়ার। “আমার ঠাকুরমা সবসময় বলতেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই, চেষ্টা করতে ক্ষতি কি?”
সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার আগে হিপ-হপ থেকে শুরু করে আফ্রোবিট, ইলেক্ট্রনিক ও স্পোকেন ওয়ার্ড-এর মতো বিভিন্ন ধারায় কাজ করেছেন তিনি। ২০১৬ সাল থেকে তিনি নিয়মিত গান প্রকাশ করছেন। তাঁর প্রথম অ্যালবাম, ‘সাম নাইটস আই ড্রিম অফ ডোরস’ ২০২২ সালে মুক্তি পায়। রিচার্ড রাসেল-এর ‘এভরিথিং ইজ রেকর্ডড’ প্রকল্পে কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি, জনপ্রিয় শিল্পী লিটল সিমজ-এর ‘পয়েন্ট অ্যান্ড কিল’-এর মতো গানেও শোনা গেছে তাঁর কণ্ঠ। এছাড়াও, ফ্রেড এগেইন-এর ‘অ্যাডোর ইউ’ গানে তাঁর কণ্ঠ ব্যবহার করা হয়েছে। ফ্রেড এগেইনের সঙ্গে একই মঞ্চে গান করার অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর জন্য অসাধারণ।
ওবংজেয়ার মনে করেন, গান হওয়া উচিত সবার জন্য বোধগম্য। তাই গানের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছানোটা তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর ভাষায়, “গান লেখার আসল উদ্দেশ্য হল, নিজের ভাবনাগুলোকে এমনভাবে প্রকাশ করা, যা সবাই বুঝতে পারে।”
রাজনৈতিক বিষয়েও ওবংজেয়ার বেশ স্পষ্টবাদী। তাঁর গানে সমাজের বিভিন্ন দিক, বিশেষ করে ব্রিটিশ সরকারের সমালোচনা ফুটে ওঠে। তাঁর নতুন অ্যালবামের ‘জেলিফিশ’ গানটি ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের দুর্বল মানসিকতা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, “ক্ষমতায় থাকা মানুষজন কীভাবে নিজেদের সুযোগের জন্য বিক্রি করে, তা দেখে আমি হতাশ।”
নতুন অ্যালবাম ‘প্যারাডাইজ নাও’ নিয়ে ওবংজেয়ার বলেন, “আমি জানি, অ্যালবামটি আমার খুব পছন্দের। মুক্তির পর যা হওয়ার, তা তো হবেই। আমি এতেই খুশি।” তাঁর মতে, সাফল্যের সংজ্ঞা হলো নিজের কাজ দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছানো।
ওবংজেয়ারের সঙ্গীতজীবন যেন এক নতুন দিগন্তের সূচনা। তাঁর গান, তাঁর কণ্ঠ এবং তাঁর ভাবনা—সবকিছুই যেন এক সুরে বাঁধা। গানের মাধ্যমে তিনি নিজের ভেতরের কথা প্রকাশ করেন, যা শ্রোতাদের হৃদয়ে নাড়া দেয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান