নাভাহো সংস্কৃতির স্বাদ: আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিমের এক ঐতিহ্যবাহী “হোগান”-এ থাকার অভিজ্ঞতা।
আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে অ্যারিজোনার মনুমেন্ট ভ্যালি অঞ্চলে, নাভাহো আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, বিশাল পাথুরে পাহাড় এবং তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি পর্যটকদের কাছে সবসময়ই একটি বিশেষ আকর্ষণ।
এবার সেই আকর্ষণকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে মোনেটভ্যালি ইকো হোগান (MonetValley Eco Hogan)। এটি একটি বিশেষ ধরনের থাকার জায়গা, যেখানে পর্যটকেরা নাভাহোদের ঐতিহ্যবাহী “হোগান”-এ থাকার সুযোগ পান।
হোগান হল নাভাহো সম্প্রদায়ের আদিবাসী ঘর, যা সাধারণত কাঠের গুঁড়ি, গাছের ছাল এবং মাটির মতো প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। মোনেটভ্যালি ইকো হোগান-এর মালিক ভার্না ইয়াযি নামের এক নাভাহো নারী।
তিনি তাঁর পরিবারের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এই “হোগান” তৈরি করেছেন। এখানে আসা পর্যটকেরা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে পারেন, কারণ এই বাড়িটিতে বিদ্যুৎ বা জলের ব্যবস্থা নেই।
রাতের আকাশে তারা ঝলমলে তারা দেখতে পারেন, যা শহরের আলো থেকে অনেক দূরে, মনুমেন্ট ভ্যালির এক অন্যতম আকর্ষণ।
ভার্না ইয়াযির মতে, এই “হোগান”-এর মূল উদ্দেশ্য হল নাভাহো জীবনযাত্রা সম্পর্কে মানুষকে জানানো। নাভাহোদের জীবনযাত্রা ভেড়া চড়ানো, তাঁত বোনা, শস্য উৎপাদন এবং রুপার কাজ—এই বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িত।
মোনেটভ্যালি নামটি এসেছে তাঁর ঠাকুরমার কাছ থেকে, যিনি নিজেও মনুমেন্ট ভ্যালিতে থাকতেন। ভার্না চান, এখানকার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নাভাহো ভাষা ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে, এবং পর্যটকদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তুলতে।
বর্তমানে এখানে একটি “হোগান” ভাড়া পাওয়া যায়, যেখানে একসঙ্গে চারজন থাকতে পারেন। ঘরটির ভিতরে নাভাহোদের তৈরি কারুকার্যখচিত রাগ এবং একটি তাঁত রয়েছে।
পর্যটকদের নিজেদের খাবার ও জল সাথে নিয়ে আসতে হয়, তবে চাইলে নাভাহো স্টাইলে তৈরি “টাকো” (Taco) খাবার অর্ডার করা যেতে পারে, যা রুটির বদলে ফ্রাই করা রুটি দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
এই “হোগান”টি অ্যারিজোনার কায়েন্টা শহরের কাছে, মনুমেন্ট ভ্যালি নাভাহো ট্রাইবাল পার্কের মধ্যে অবস্থিত।
এখানকার প্রধান আকর্ষণ হল বিশাল আকারের লাল বেলেপাথরের পাহাড়, যা প্রায় ১০০০ ফুট পর্যন্ত উঁচু। এই পাহাড়গুলো বাতাসের ধাক্কায় তৈরি হওয়া বালুকাময় প্রান্তরের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।
সাধারণত মে মাস থেকে মোনেটভ্যালি ইকো হোগান-এর দরজা খোলা হয়, যা আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। এখানে থাকার জন্য সরাসরি monetvalley.com ওয়েবসাইটে বুকিং করা যেতে পারে, যেখানে জনপ্রতি রাতের জন্য খরচ হয় ১২৫ মার্কিন ডলার।
এই ধরনের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। আমাদের দেশেও বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে, যা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে।
মোনেটভ্যালি ইকো হোগানের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনে আগ্রহী যে কারও জন্য একটি দারুণ সুযোগ।
তথ্য সূত্র: ট্র্যাভেল এন্ড লেজার