নতুন এক গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা আমাদের সৌরজগতের কাছাকাছি একটি বিশাল গ্যাসীয় মেঘের সন্ধান পেয়েছেন, যা নক্ষত্র এবং গ্রহ কীভাবে গঠিত হয় সে সম্পর্কে নতুন তথ্য দিতে পারে। এই মেঘটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইওস’, যা গ্রিক দেবী অফ ডনের (ঊষার দেবী) নামে পরিচিত।
এটি এতটাই বিশাল যে খালি চোখে দৃশ্যমান হলে, রাতের আকাশে চাঁদের চেয়ে প্রায় ৪০ গুণ বড় দেখাতো।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ইওস আমাদের থেকে মাত্র ৩০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে কাছের আণবিক মেঘ, যা নক্ষত্র এবং গ্রহ তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা লাভের এক দারুণ সুযোগ এনে দিয়েছে।
এই মেঘের ভর সূর্যের ভরের প্রায় ৩,৪০০ গুণ।
সাধারণত, বিজ্ঞানীরা কার্বন মনোক্সাইড শনাক্তকরণের মাধ্যমে আণবিক মেঘ খুঁজে পান। কিন্তু ইওস-এ কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ কম থাকার কারণে, সনাক্তকরণ প্রক্রিয়াটি কঠিন ছিল।
বিজ্ঞানীরা এক্ষেত্রে হাইড্রোজেন থেকে নির্গত অতিবেগুনী আলো ব্যবহার করেছেন। কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের একজন জ্যোতিপদার্থবিদ, টমাস হাওয়ার্থের মতে, “আমরা সাধারণত কার্বন মনোক্সাইডের দিকে তাকাই, যা সহজেই সনাক্ত করা যায়।
তবে, এই ক্ষেত্রে, আমরা ভিন্ন আলোকরশ্মি ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছি।”
এই আবিষ্কারের জন্য কোরীয় উপগ্রহ STSAT-১-এর একটি যন্ত্র FIMS-SPEAR থেকে পাওয়া ডেটা ব্যবহার করা হয়েছে।
রুটার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক ব্লেকসলি বার্খার্ট এই ডেটা বিশ্লেষণ করেছেন।
তিনি বলেন, “এটিই প্রথম আণবিক মেঘ, যা সরাসরি আণবিক হাইড্রোজেনের অতিবেগুনী বিকিরণ দেখে আবিষ্কার করা হয়েছে।”
বার্খার্ট আরও যোগ করেন, “ইওস আবিষ্কারের ফলে, আমরা সরাসরি কিভাবে আণবিক মেঘ তৈরি হয় এবং ভেঙে যায়, সেইসাথে একটি গ্যালাক্সি কীভাবে আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস ও ধূলিকণা থেকে নক্ষত্র এবং গ্রহ তৈরি করে, তা পরিমাপ করতে পারব।”
নেদারল্যান্ডসের লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মেলিসা ম্যাকক্লিউর এই আবিষ্কারটিকে একটি “চমৎকার আবিষ্কার” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের সৌরজগতের কাছাকাছি এমন বিশাল কিছু রয়েছে, যা আগে দেখা যায়নি, এটা সত্যিই বিস্ময়কর।”
তথ্যসূত্র: সিএনএন