কানাডার রাজনীতিতে হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন মার্ক কার্নি। দেশটির আসন্ন নির্বাচনে তার দল, লিবারেল পার্টির জয়ের সম্ভাবনা বাড়ছে, যার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিগুলোকে।
ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য বানানোর হুমকি, দেশটির মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনাকে আরও শক্তিশালী করেছে, যা কার্নি এবং তার দলের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে এনেছে।
মার্ক কার্নি, যিনি সম্প্রতি জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের পর লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন, একসময় কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান ছিলেন এবং পরে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের গভর্নর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার এই অভিজ্ঞতা এবং সুপরিচিতি তাকে ভোটারদের কাছে স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য একজন নেতা হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক নীতিগুলো কানাডিয়ানদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এর ফলস্বরূপ, আগে নির্বাচনে পিছিয়ে থাকা লিবারেল পার্টি এখন জনমত জরিপে এগিয়ে রয়েছে।
একটি জরিপে দেখা গেছে, জানুয়ারিতে যেখানে কনজারভেটিভ পার্টি এগিয়ে ছিল, সেখানে এপ্রিল মাসের শেষ দিকে এসে লিবারেল পার্টি ৮ শতাংশ ভোটে এগিয়ে যায়।
কার্নি শুধু একজন সুদক্ষ ব্যাংকারই নন, বরং সংকটকালে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও তার সুনাম রয়েছে।
২০০৮ সালের আর্থিক মন্দা এবং ব্রেক্সিট-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার এই অভিজ্ঞতাই তাকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
অন্যদিকে, কার্নির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়ের পোলিএভরে। তিনি ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আদলে ‘কানাডা প্রথম’ স্লোগান ব্যবহার করে নির্বাচনে লড়ছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই নির্বাচন কানাডার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যেখানে দেশটির জনগণ হয়তো পপুলিজমকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং কার্নির মতো অভিজ্ঞ ও স্থিতিশীল নেতৃত্বকে বেছে নেবে।
কার্নি যদি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সম্পর্ক নতুন দিকে মোড় নিতে পারে।
কার্নি এরই মধ্যে বলেছেন, ট্রাম্পের নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি নির্বাচিত হলে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নতুন করে আলোচনা করার কথাও জানিয়েছেন, যা উভয় দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বাণিজ্য নীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপগুলো বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
কানাডার নির্বাচনের দিকে তাকালে, এই বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হয়। তাই, কানাডার নির্বাচনের ফলাফল শুধু দেশটির জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস