শিরোনাম: আমেরিকায় ক্রিকেটের জয়যাত্রা: সাফল্যের পথে কতটা এগিয়ে?
নিউ ইয়র্ক থেকে টেক্সাস—ক্রিকেটের ঢেউ লেগেছে আমেরিকাজুড়ে। খেলাটির বিশ্বায়নের পথে এবার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হতে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ক্রিকেটের এই নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পেছনে রয়েছে অনেক পুরোনো ইতিহাস, রয়েছে প্রবাসী মানুষের আবেগ আর বিপুল বিনিয়োগের হাতছানি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যেন সেই স্বপ্নেরই বাস্তব রূপ, যেখানে ছিল টানটান উত্তেজনা, ছিল বিতর্ক, আবার ছিল নতুন সম্ভাবনার হাতছানি।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট খেলার প্রচলন কিন্তু নতুন নয়। ম্যানহাটনের নিচে, সেন্ট্রাল পার্কের আনাচে কানাচে একসময় ক্রিকেটের মাঠ ছিল, যেখানে নিয়মিত খেলা হতো। আঠারো শতকে স্থানীয় দলগুলোর সঙ্গে লর্ডস একাদশের খেলাও হয়েছে এখানে। ১৮৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে খেলা হওয়া একটি ম্যাচকে অনেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রথম নিদর্শন হিসেবেও মনে করেন। কিন্তু উনিশ শতকে বেসবলের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। পর্যাপ্ত মাঠ, সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণের অভাব এবং বেসবলের সহজলভ্যতাও এর কারণ ছিল। জর্জ ও হ্যারি রাইটের মতো পেশাদার ক্রিকেটাররা বেসবলের দিকে ঝুঁকে যান।
দীর্ঘদিন পর, আবারও আমেরিকায় ক্রিকেটকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা চলছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে প্রবাসী ভারতীয়, পাকিস্তানি ও অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষজন। বর্তমানে আমেরিকায় প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষের বসবাস, যাদের মধ্যে ক্রিকেট একটি প্রিয় খেলা। এছাড়া, বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ও ক্যারিবীয়ান আমেরিকানদের মাঝেও ক্রিকেট বেশ জনপ্রিয়।
২০২৩ সালে যাত্রা শুরু করে মেজর লিগ ক্রিকেট (এমএলসি)। এই লিগে বিনিয়োগ করেছেন প্রযুক্তি ও বাণিজ্য জগতের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। মাইক্রোসফটের চেয়ারম্যান সত্য নাদেলা, এডোবির চেয়ারম্যান শান্তনু নারায়ণ, অ্যামাজনের সঙ্গে যুক্ত আনন্দ রাজারামন ও ভেঙ্কি হারিনারায়ণের মতো ব্যবসায়ীরাও এর সঙ্গে জড়িত। ভারতীয় ক্রিকেট দলের ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদেরও এখানে বিনিয়োগ রয়েছে।
এমএলসি’র হাত ধরে ক্রিকেটের উন্নতি ঘটছে দ্রুতগতিতে। দলগুলো এরই মধ্যে একাডেমি তৈরি করেছে এবং মাঠ তৈরির পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে। নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে একটি মাঠ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, যা সম্ভবত অলিম্পিক ক্রিকেটেরও কেন্দ্র হবে। লস অ্যাঞ্জেলেসে ২০২৮ সালের অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এর সম্ভাবনা আরও বেড়েছে।
তবে, পথটা সহজ নয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় মাঠের দুর্বল পিচ নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। এছাড়া, মাঠ প্রস্তুত করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে, যা নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে। তারপরও, এই টুর্নামেন্ট আমেরিকার মানুষের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ তৈরি করতে পেরেছে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমেরিকার জয় ছিল ক্রিকেট বিশ্বে আলোচনার বিষয়। সেই ম্যাচে জয়লাভের পর দেশটির গণমাধ্যমগুলোতেও খেলাটি নিয়ে আগ্রহ বাড়ে। এমনকি, ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে উপচে পড়ে দর্শক।
ক্রিকেটকে আমেরিকায় জনপ্রিয় করতে হলে প্রয়োজন তৃণমূল পর্যায়ে আরও বেশি বিনিয়োগ। ভালো মানের মাঠ তৈরি করা, পর্যাপ্ত কোচিংয়ের ব্যবস্থা করা এবং খেলাটির সঙ্গে নতুন প্রজন্মের পরিচয় করানো এখন জরুরি। হয়তো কয়েক দশক সময় লাগবে, তবে ফুটবল যেভাবে আমেরিকায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে, সেই পথেই হাঁটতে চাইছে ক্রিকেট।
ভবিষ্যতে এমএলসি’র হাত ধরে ক্রিকেট আরও বিকশিত হবে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে, আমেরিকার ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অনেকটাই এই লিগের ওপর নির্ভরশীল।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান