কানাডার আসন্ন নির্বাচনে ফিলিস্তিন ইস্যু: ভোটের ময়দানে গণহত্যার অভিযোগ
কানাডার রাজনৈতিক অঙ্গনে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিন ইস্যুটি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের প্রতি কানাডার রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি ভোটারদের, বিশেষ করে আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে তীব্র প্রভাব ফেলছে।
অনেকের মতে, ফিলিস্তিনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিধা বিভক্ত নীতি তাদের ভোট ব্যাংককে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের আগে কানাডার প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। একসময় রক্ষণশীল দলের নেতা পিয়েরে পয়েলিয়েভ্রে’কে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখা গেলেও, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন পরিস্থিতিকে নতুন মোড় দিয়েছে।
এরপরই উদারপন্থী দল মার্ক কার্নিকে তাদের নতুন নেতা হিসেবে নির্বাচিত করে।
তবে, নির্বাচনী প্রচারণার মূল বিষয় এখন পর্যন্ত কানাডার সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্ভাব্য হুমকি, যা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। এর পাশাপাশি, ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের চালানো কথিত গণহত্যা বিষয়টি অনেক কানাডিয়ান নাগরিকের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানানো আন্দোলনকারীরা মনে করছেন, ইসরায়েলের প্রতি কানাডার রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন অব্যাহত থাকলে নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সম্প্রতি অটোয়ায় অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানাতে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি বাতিলের দাবি জানান।
জানা গেছে, কানাডার বিভিন্ন শহরে #ElectPalestine, মুসলিমস ভোট এবং ভোট প্যালেস্টাইন-এর মতো সংগঠনগুলো ফিলিস্তিনের সমর্থনে জনমত গঠনে কাজ করছে। তাদের মূল লক্ষ্য হলো, ফিলিস্তিন ইস্যুকে কানাডার রাজনৈতিক আলোচনায় মুখ্য করে তোলা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মুসলিম ও আরব ভোটাররা কানাডার প্রায় ৯০টি নির্বাচনী এলাকার ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন এবং ৪০টির বেশি আসনে ভোটের হিসাব পাল্টে দিতে পারেন।
ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ কানাডিয়ান মুসলিমস (NCCM) -এর জরিপ অনুযায়ী, অর্ধেকের বেশি কানাডিয়ান ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের পক্ষে। এমনকি, প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ এই নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোরভাবে কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে মার্ক কার্নি এবং পিয়েরে পয়েলিয়েভ্রে’র মতো নেতাদের ফিলিস্তিন ইস্যুতে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে হতে পারে। পয়েলিয়েভ্রে’কে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকে ‘ঘৃণা অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করার জন্য অনেকে সমালোচনা করেছেন।
অন্যদিকে, কার্নিকে ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে নীরব থাকতে দেখা গেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, কার্নি যদি ফিলিস্তিন ইস্যুতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চান, তাহলে তাকে অস্ত্র চুক্তি বাতিলের পক্ষে অবস্থান নিতে হবে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে সমর্থন করতে হবে এবং যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয় না দেওয়ার বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে।
অন্যথায়, আরব ও মুসলিম ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা