মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষস্থানীয় প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার গোপনীয়তা রক্ষার দুর্বলতার কারণে তিনি গুপ্তচরবৃত্তির ঝুঁকিতে পড়েছেন, এমন উদ্বেগ বাড়ছে। সম্প্রতি, জানা গেছে যে তিনি সংবেদনশীল সামরিক তথ্য আদান-প্রদানের জন্য সুরক্ষিত নয় এমন একটি মেসেজিং অ্যাপ, ‘সিগন্যাল’-এর মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান করেছেন।
এই ঘটনায় তাঁর এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের ওপর বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি আরও বেড়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের এই কর্মকর্তার এমন কর্মকাণ্ডের কারণে মিত্র দেশগুলোও এখন যুক্তরাষ্ট্রকে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য মনে করছে না। কারণ, এমন নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ফলে সৈন্যদের গতিবিধি, গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের শনাক্ত করা এবং জিম্মি করার মতো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এমনকি এই ধরনের দুর্বলতা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ওই কর্মকর্তা তাঁর স্ত্রী, ভাই এবং আরও কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির সঙ্গে একটি ‘সিগন্যাল’ গ্রুপ তৈরি করে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদান করতেন। এর আগে, তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে একই ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করেছেন।
এছাড়াও, ইয়েমেনে সামরিক অভিযান সংক্রান্ত অতি-গোপনীয় তথ্যও তিনি সেখানে শেয়ার করেছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত সাবেক মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। তাঁদের মতে, ওই কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং হোয়াইট হাউসের গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে।
তাঁদের ধারণা, রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলো এখন সরাসরি ওই কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনকারীদের ওপর নজর রাখছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো বিদেশি সরকার সরাসরি ওই কর্মকর্তার ডিভাইস হ্যাক না করেও তাঁর তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। যেমন, ওই কর্মকর্তা তাঁর স্ত্রীকে কোনো লিংক পাঠালে, তাঁর স্ত্রী যদি সেই লিংকে ক্লিক করেন, তাহলে তাঁর ফোনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করতে পারে।
এর মাধ্যমে চীনা, ইরানি বা রুশ গোয়েন্দারা সহজেই তথ্য চুরি করতে পারে।
আরেকজন বিশেষজ্ঞের মতে, ওই কর্মকর্তার এমন কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। কারণ, এ ধরনের তথ্য ফাঁসের ফলে প্রতিপক্ষ সহজেই সৈন্যদের গতিবিধি এবং আক্রমণের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পারে।
এই বিষয়ে সাবেক এক মেরিন সেনা কর্মকর্তা জানান, কর্মকর্তাদের জন্য নিরাপত্তা বিষয়ক এমন দুর্বলতা খুবই উদ্বেগের বিষয়। তিনি আরও বলেন, যদি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী অনিরাপদ ডিভাইসের মাধ্যমে গোপন তথ্য আদান-প্রদান করতেন, তবে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতো এবং বিচারের মুখোমুখি করা হতো।
সম্প্রতি, হোয়াইট হাউসের ইস্টার এগ রোল অনুষ্ঠানে ওই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। তিনি একে ‘মিডিয়ার অপপ্রচার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান