মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়াকে বাগে আনার চেষ্টা যে খুব একটা সহজ হবে না, তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি এখনো পর্যন্ত দেখা যায়নি।
বরং, কূটনীতির ময়দানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চালে বেশ কোণঠাসা অবস্থা ট্রাম্প শিবিরের।
হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে ট্রাম্প অন্তত দু’বার পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ ফোনে কথা বলেছেন। এমনকি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার জন্য স্টিভ উইটকফ নামক একজন দূতকেও একাধিকবার মস্কোয় পাঠিয়েছেন তিনি।
কিন্তু ফল? শূন্য। ক্রেমলিন-ঘনিষ্ঠ বিশ্লেষকদের মতে, কোনো ফল তো আসেইনি, বরং উইটকফ ফিরে আসার পর রাশিয়ার পক্ষ থেকে পুরোনো কিছু কথা আবার শোনা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার কৌশল হলো— ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করা। প্রতিটি বিষয়ে দর কষাকষি করা, অথবা সরাসরি ‘না’ না বলে বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রাখা— এমনটা প্রায়ই করে থাকে তারা। সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতির আলোচনাতেও এমনটা দেখা গেছে।
বিষয়টি হলো, হয়তো ট্রাম্প প্রশাসন এই ধরনের কৌশলের সঙ্গে পরিচিত ছিল না, অথবা তারা হয়তো পরিস্থিতি সেভাবেই সামাল দিতে চাইছে।
সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অ্যাঞ্জেলা স্টেন্ট সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ট্রাম্পের কথা বলার ধরন দেখে মনে হয়, তিনি বিশ্বকে কয়েকটি পরাশক্তির মধ্যে একটি খেলার স্থান হিসেবে দেখেন, যেখানে ছোট দেশগুলোর কোনো গুরুত্ব নেই।
পুতিনের কৌশল নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিনি সব সময়ই আলোচনার টেবিলে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা করেন। আলোচনা শুরুর আগে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করানো থেকে শুরু করে, অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তৈরি করা— এমন অনেক কৌশলই তার জানা।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৮ সালে হেলসিঙ্কিতে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে বৈঠকের সময়কার একটি ঘটনার কথা। বৈঠকের মাঝে পুতিন ট্রাম্পকে একটি ফুটবল উপহার দিয়ে বলেছিলেন, “এখন বল আপনার কোর্টে।”
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি ছিল কূটনীতির একটি কৌশল, যেখানে বিজয়ী ও পরাজিত— উভয়ই বিদ্যমান।
অন্যদিকে, মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়াকে বাগে আনতে না পারার পেছনে অন্যতম কারণ হলো— অভিজ্ঞতার অভাব।
রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য স্টিভ উইটকফ-এর মতো একজন অনভিজ্ঞ ব্যক্তিকে পাঠানো হয়েছে, যিনি এর আগে রাজনীতি বা কূটনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই দুর্বলতা পুতিনের জন্য পরিস্থিতি আরও সহজ করে দিয়েছে। কারণ, রুশ প্রেসিডেন্ট জানেন, আলোচনার টেবিলে তিনি কী চান এবং কীভাবে তা আদায় করতে হয়।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত ইউক্রেনকে কোনো ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। এমনকি, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়েও ট্রাম্প প্রশাসন খুব একটা আগ্রহী নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের কাছে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের মূল সমস্যা হলো— তারা একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গি ভালোভাবে বোঝে না।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর, যুক্তরাষ্ট্র ভেবেছিল রাশিয়ার সঙ্গে একটি কৌশলগত সম্পর্ক তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক টমাস গ্রাহাম মনে করেন, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে একটি জটিল, প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় থাকবে।
তবে এটিকে সামরিক সংঘাতের দিকে যেতে না দিয়ে, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন