শিরোনাম: ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ধাক্কা: বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা, বাংলাদেশের জন্য কী প্রভাব?
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে শুল্ক আরোপের পুরোনো নীতিতে ফিরে আসতেই বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন বাজারে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতিপথকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমদানি পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসানোর পক্ষে ছিলেন। তার যুক্তি ছিল, এর মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো যাবে এবং দেশের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
ক্ষমতায় আসার একশ দিনের মধ্যেই তিনি বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেন। এর ফলস্বরূপ, শেয়ার বাজারে দরপতন শুরু হয় এবং অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেন, এমন নীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ছিল একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাজি। এর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং দেশটির ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
এর কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন, শুল্কের বোঝা শেষ পর্যন্ত আমেরিকান ভোক্তাদের ওপরই চাপবে, যার ফলে পণ্যের দাম বাড়বে। উদাহরণস্বরূপ, একটি পরিবারের বছরে প্রায় ৪,৭০০ ডলার (প্রায় ৫,১৭,০০০ টাকা) বেশি খরচ হতে পারে।
শুল্ক আরোপের ফলে চীন এর বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর তারা অতিরিক্ত শুল্ক বসায়, যা বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও তীব্র করে তোলে।
এর ফলস্বরূপ, বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তবে, সমালোচনার মুখে ট্রাম্প তার কিছু সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন এবং কিছু শুল্কের মেয়াদ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন। যদিও এই পদক্ষেপ বাজারের অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করেছে, তবে বাণিজ্য বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হলো বিশ্ব বাণিজ্যে দেখা দেওয়া এই অস্থিরতা। কারণ, এর ফলে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বিশেষ করে তৈরি পোশাকের মতো প্রধান রপ্তানি পণ্যের বাজারে চাহিদা কমে যেতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের উচিত হবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। বাণিজ্য সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে এবং নতুন বাজারের সন্ধান করতে এখনই উদ্যোগী হতে হবে।
পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এই পরিবর্তনে টিকে থাকতে হলে, দেশের ব্যবসায়ীদেরও নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
বর্তমানে, বিশ্ব অর্থনীতি এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির এই যাত্রা ভবিষ্যতে আরও অনেক অনিশ্চয়তা নিয়ে আসতে পারে, যা বিশ্ব বাণিজ্য এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।