কোরীয় শিল্পী ডো হো সুহর “ওয়াক দ্য হাউস” : উদ্বাস্তু জীবনের স্মৃতি ও স্থাপত্যের এক শৈল্পিক উদযাপন।
শিল্প সবসময়ই মানুষের ভেতরের অনুভূতিগুলোকে নতুন রূপে প্রকাশ করে। কোরীয় শিল্পী ডো হো সুহ তেমনই একজন, যিনি তাঁর শিল্পের মাধ্যমে উদ্বাস্তু জীবন, স্মৃতি এবং স্থাপত্যের গভীর সম্পর্ককে উন্মোচন করেন।
লন্ডনের টেট মডার্নে সম্প্রতি তাঁর “ওয়াক দ্য হাউস” শীর্ষক প্রদর্শনীটি দর্শকদের মন ছুঁয়ে গেছে, যেখানে শিল্পী তাঁর জীবনের বিভিন্ন মুহূর্ত, স্থান এবং অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।
এই প্রদর্শনীতে প্রধান আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন আকারের ঘর ও আবাসনের মডেল। শিল্পী তাঁর শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত স্থান, যেমন কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী ‘হানোক’ ঘর, থেকে শুরু করে বিভিন্ন শহরে তাঁর বসবাস করা অ্যাপার্টমেন্টগুলোকে বিশেষভাবে তৈরি করেছেন।
কাঠ, কাগজ এবং কাপড়ের সমন্বয়ে তৈরি এই ঘরগুলো যেন শিল্পীর জীবনের এক একটি অধ্যায়। প্রতিটি মডেলের নির্মাণশৈলীতে ছিল সূক্ষ্মতা এবং গভীর মনোযোগ।
উদাহরণস্বরূপ, একটি ‘হানোক’ ঘরের মডেল তৈরি করা হয়েছে কাগজের মাধ্যমে, যা শিল্পীর শৈশবের স্মৃতিকে ধারণ করে। সময়ের সাথে সাথে কাগজের রং পরিবর্তন হয়েছে, যা যেন সময়ের বিবর্তন এবং স্মৃতির গভীরতাকে প্রকাশ করে।
প্রদর্শনীতে শুধু স্থাপত্যের মডেলই ছিল না, বরং ছিল বিভিন্ন উপাদান, যা দর্শকের মনে গভীর রেখাপাত করে। তার মধ্যে ছিল তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র, যেমন দরজার হাতল, বৈদ্যুতিক সুইচ, এমনকি তোয়ালে রাখার র্যাক পর্যন্ত।
এগুলো যেন শিল্পীর অতীতের প্রতিচ্ছবি, যা দর্শককে সেই স্থানে, সেই সময়ে নিয়ে যায়। প্রদর্শনীতে আরও ছিল তার তৈরি করা কিছু চলচ্চিত্র এবং চিত্রের সংগ্রহ।
এর মধ্যে ১৯৮০ সালের কোরিয়ার গওয়াংজু বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে তৈরি একটি শিল্পকর্ম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শিল্পী তাঁর শিল্পের মাধ্যমে সেই সময়ের স্মৃতি এবং কষ্টের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন, যা দর্শকদের মধ্যে গভীর আবেগ সৃষ্টি করে।
ডো হো সুহর কাজ শুধুমাত্র একটি শিল্পকর্ম নয়, বরং তা মানুষের জীবনের গল্প বলে। একজন মানুষের ব্যক্তিগত স্মৃতি, তার ঘর এবং তার অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কীভাবে একটি বৃহত্তর প্রেক্ষাপট তৈরি হতে পারে, তা এই প্রদর্শনীতে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
যারা তাঁদের শিকড় থেকে দূরে গিয়েছেন, অথবা যারা তাঁদের অতীতকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চান, তাঁদের জন্য এই প্রদর্শনী একটি বিশেষ আকর্ষণ।
প্রদর্শনীটি সম্ভবত ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ছিল, তবে এই ধরনের শিল্পকর্ম যেকোনো সময় দর্শকদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এটি দর্শকদের নিজেদের জীবনের গল্পগুলোর সাথে শিল্পীর কাজকে মেলাতে উৎসাহিত করে।
এটি দেখায়, কীভাবে আমাদের চারপাশের স্থান, আমাদের স্মৃতি এবং আমাদের অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান