শিশুদের বই পড়ে শোনানো নিয়ে অভিভাবকদের অনীহা বাড়ছে? সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন উদ্বেগজনক তথ্য। যেখানে দেখা যাচ্ছে, শিশুদের বই পড়ে শোনানোটা এখন অনেক অভিভাবকের কাছে আনন্দের বিষয় নয়।
বরং এটিকে তারা প্রয়োজনীয়তার খাতিরে করা একটি কাজ হিসেবেই দেখছেন। গবেষণাটি জানাচ্ছে, বর্তমানে মাত্র ৪০ শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানের সঙ্গে বই পড়ার সময় আনন্দ পান।
যদিও শিশুদের বেড়ে ওঠার সময়ে তাদের বই পড়ে শোনানোর গুরুত্ব অপরিসীম। এই কাজটি শিশুদের মধ্যে পাঠের প্রতি আগ্রহ তৈরি করে এবং তাদের শব্দ জ্ঞান বাড়াতে সহায়তা করে।
শিশুদের সঙ্গে বই পড়াটা তাদের অভিভাবকদের মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্কও তৈরি করে। আগে যেখানে শিশুদের নিয়মিত বই পড়ে শোনানোর প্রবণতা বেশি ছিল, সেখানে এখন এর চিত্রটা ভিন্ন।
২০১২ সালে যেখানে প্রায় ৬৪ শতাংশ অভিভাবক তাদের শিশুদের নিয়মিত বই পড়ে শোনাতেন, সেখানে বর্তমানে এই হার ৪০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। শিশুদের ক্ষেত্রেও এই প্রবণতা কম দেখা যাচ্ছে।
গবেষণায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে। সেটি হলো ছেলে ও মেয়ে শিশুদের মধ্যে বই পড়ার ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য। দেখা গেছে, মেয়ে শিশুদের তুলনায় ছেলে শিশুদের প্রতিদিন বই পড়ে শোনানোর পরিমাণ বেশ কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ তৈরি করতে অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। শিশুদের বই পড়ার প্রতি আকৃষ্ট করতে পারলে তারা আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা করবে এবং বিদ্যালয়ে তাদের ভালো ফল করার সম্ভাবনাও বাড়বে।
অভিভাবকদের মনে রাখতে হবে, বই পড়াটা কেবল একটি শিক্ষামূলক বিষয় নয়, বরং এটি একটি উপভোগ্য বিষয়ও হতে পারে। গবেষণায় আরও একটি বিষয় উঠে এসেছে, যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
অনেক অভিভাবক মনে করেন, শিশুরা যখন নিজেরাই পড়তে শিখে যায়, তখন তাদের আর বই পড়ে শোনানোর প্রয়োজন নেই। তাদের ধারণা, এতে হয়তো শিশুরা বই পড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারণাটি ভুল। বরং শিশুদের নিয়মিত বই পড়ে শোনালে তাদের মধ্যে পড়ার অভ্যাস আরও দৃঢ় হয়। অন্যদিকে, অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানের পড়াশোনার চাপে অতিষ্ঠ।
তাদের মতে, ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে এত বেশি পড়াশোনা করতে হয় যে, তারা বই পড়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পায় না। ২০১২ সালে যেখানে ২৫ শতাংশ অভিভাবক এমনটা মনে করতেন, সেখানে বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ শতাংশে।
শিশুদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে এবং তাদের ভালো ভবিষ্যতের জন্য অভিভাবকদের সচেতন হওয়াটা জরুরি। শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারলে তারা জ্ঞান অর্জন করতে পারবে এবং তাদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান