শিরোনাম: কঠিন সময়েও কিভাবে ভালো থাকা যায়: নতুন গবেষণা ও বাংলাদেশের জন্য এর শিক্ষা
জীবনে সুখী হওয়ার বাইরেও এমন কিছু বিষয় আছে যা মানুষকে পরিপূর্ণতা এনে দেয়। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা তেমনটাই বলছে।
এই গবেষণায় কিভাবে মানুষ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ভালো থাকতে পারে, সেই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
গবেষণায় ‘ফ্লারিশিং’ বা ‘পূর্ণতা’র ধারণা দেওয়া হয়েছে, যা শুধু সুখের চেয়েও গভীর কিছু। এখানে স্বাস্থ্য, আর্থিক নিরাপত্তা, জীবনের অর্থ, সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত চরিত্র – এই বিষয়গুলো একসাথে বিবেচনা করা হয়।
যারা ভালো আছেন, তাদের জীবনের এই দিকগুলো উন্নত থাকে।
‘গ্লোবাল ফ্লারিশিং স্টাডি’ নামের এই গবেষণাটি ২২টি দেশ এবং চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং-এ পরিচালিত হয়েছে। এতে ২ লক্ষ ৭ হাজার মানুষের ওপর জরিপ চালানো হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু দেশের মানুষ, যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা ভালো নয়, তারাও ‘ফ্লারিশিং’-এর দিক থেকে অনেক এগিয়ে আছে।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্রের বেয়লার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. বায়রন জনসন। তিনি বলেন, “এই গবেষণার বিশেষত্ব হলো এর ব্যাপকতা।
বিশ্বের প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষের কথা এতে তুলে ধরা হয়েছে।”
গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ফ্লারিশিং’-এর দিক থেকে ইন্দোনেশিয়া সবার উপরে। এরপর রয়েছে মেক্সিকো এবং ফিলিপাইন।
মজার বিষয় হলো, এই দেশগুলো সাধারণত বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় উপরের দিকে থাকে না।
উদাহরণস্বরূপ, সুইডেন সুখী দেশগুলোর মধ্যে ভালো অবস্থানে থাকলেও ‘ফ্লারিশিং’-এর ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে।
যুক্তরাষ্ট্রও এই তালিকায় মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে।
গবেষণায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। তা হলো, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ‘ফ্লারিশিং’-এর মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম।
অধ্যাপক ড. টাইলার ভ্যানডারওয়েলের মতে, “এই তথ্য কিছুটা উদ্বেগজনক।
কারণ আমরা দেখছি, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে ‘ফ্লারিশিং’-এর মাত্রা বাড়ে।”
গবেষকরা বলছেন, তরুণদের এই পিছিয়ে থাকার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে।
উন্নত দেশগুলোতে ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য শিক্ষাব্যবস্থা বেশ প্রতিযোগিতামূলক। এর ফলে তরুণদের ওপর মানসিক চাপ বাড়ে।
এছাড়াও, সামাজিক উন্নতির সুযোগ কমে যাওয়াটাও একটি কারণ হতে পারে।
গবেষণায় ‘ফ্লারিশিং’ পরিমাপের জন্য ছয়টি প্রধান দিক বিবেচনা করা হয়েছে: সুখ, স্বাস্থ্য, জীবনের অর্থ, চরিত্র, সম্পর্ক এবং আর্থিক নিরাপত্তা।
প্রতিটি দিকের জন্য দুটি করে প্রশ্ন ছিল।
গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত দেশগুলোতে আর্থিক নিরাপত্তা বেশি থাকলেও জীবনের অন্যান্য দিক, যেমন – সম্পর্কের গভীরতা, সামাজিক ভালো কাজের প্রবণতা, ইত্যাদির ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে।
ড. ভ্যানডারওয়েল বলেন, “অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি কিভাবে আমরা জীবনের গভীরতা, সম্পর্ক এবং চরিত্রের উন্নতি করতে পারি, সেই বিষয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।”
গবেষণায় এমন কিছু দেশের নাম এসেছে, যা দেখে অনেকে অবাক হয়েছেন। ইন্দোনেশিয়া এক্ষেত্রে সবার উপরে ছিল।
ফিলিপাইন ও নাইজেরিয়াও ভালো ফল করেছে।
গবেষণা থেকে জানা যায়, ভালো থাকার জন্য মানুষের কিছু বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ থাকে।
তবে কিছু বিষয়, যেমন – প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অর্থনৈতিক সংকট, মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফেলিক্স চিয়াং বলেন, “একজন ব্যক্তি অসুখী হলে, সেটি তার ব্যক্তিগত সমস্যা।
কিন্তু যখন একটি সমাজের মানুষ অসুখী হয়, তখন বুঝতে হবে সেখানে কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে, যার সমাধানও কাঠামোগতভাবে করতে হবে।”
যদি আপনি নিজের ‘ফ্লারিশিং’ নিয়ে চিন্তা করতে চান, তাহলে এই ১২টি প্রশ্ন দেখে নিতে পারেন: [এখানে ১২টি প্রশ্নের লিংক দিন]।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ভালো থাকার জন্য মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ।
যারা ধর্মীয় বা সামাজিক কাজে যুক্ত থাকেন, তাদের মধ্যে ভালো থাকার প্রবণতা বেশি।
এই গবেষণা থেকে আমরা বুঝতে পারি, কঠিন সময়েও ভালো থাকার অনেক উপায় আছে।
পরিবার, বন্ধু এবং সমাজের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখাটা এক্ষেত্রে খুব জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন