যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদন ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে লিঙ্গ পরিচয় বিষয়ক উদ্বেগে ভোগা তরুণদের জন্য হরমোন থেরাপির পরিবর্তে আচরণগত থেরাপির সুপারিশ করা হয়েছে। দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (HHS) এই পর্যালোচনাটি প্রকাশ করে। এই পদক্ষেপটি মূলত এমন একটি জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা পদ্ধতির পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, যা বর্তমানে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য তরুণদের চিকিৎসা বিষয়ক পদ্ধতিগুলোর ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। বিশেষ করে, ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য হরমোন থেরাপি বা অস্ত্রোপচারের মতো চিকিৎসা প্রদানের আগে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অল্প বয়সে এ ধরনের চিকিৎসা নিলে ভবিষ্যতে তাদের প্রজনন স্বাস্থ্যে সমস্যা হতে পারে।
অন্যদিকে, এই প্রতিবেদনের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন অনেক চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ। তাদের মতে, লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য চিকিৎসা নেওয়া তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকস-এর মতো প্রধান চিকিৎসা সংগঠনগুলো এই প্রতিবেদনের সমালোচনা করে জানিয়েছে, তারা এই ধরনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নয়। তাদের মতে, লিঙ্গ-সংক্রান্ত পরিচয়ের বিষয়টি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার একটি অংশ।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, এই ধরনের নীতি তরুণদের মধ্যে ভীতি তৈরি করতে পারে এবং তাদের চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের ফলে, লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা ও শিক্ষার জন্য বরাদ্দকৃত অনুদানও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলছে, এবং এর ফলস্বরূপ কিছু হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এই বিতর্কের মধ্যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখানেও এলজিবিটি কমিউনিটির অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে, বাংলাদেশে এই বিষয়ক সচেতনতা এখনো তুলনামূলকভাবে কম এবং অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধার কারণে তাদের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা প্রমাণ করে, লিঙ্গ পরিচয় বিষয়ক স্বাস্থ্যসেবা একটি জটিল বিষয়, যা বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হয়। এই বিতর্কের ফলে, বিশ্বজুড়ে লিঙ্গ সংবেদনশীল স্বাস্থ্যসেবা এবং মানবাধিকারের গুরুত্ব আরও একবার সামনে এসেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।