শিরোনাম: লিভারপুলের ঐতিহাসিক জয়ে ভূমিকম্প, গবেষণা বলছে মাঠ কাঁপিয়েছিল সমর্থকরা!
ফুটবল ভালোবাসেন এমন মানুষের কাছে আনন্দের উপলক্ষ্য আসলে কতখানি শক্তিশালী হতে পারে, তা হয়তো অনেকেই অনুভব করেছেন। খেলা চলাকালীন সময়ে গ্যালারিতে উন্মাদনা যেন বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো আছড়ে পরে।
সম্প্রতি তেমনই এক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ইংল্যান্ডের অ্যানফিল্ড স্টেডিয়াম। লিভারপুল ফুটবল ক্লাব (Liverpool FC)-এর খেলা দেখতে আসা সমর্থকদের উল্লাস এতটাই তীব্র ছিল যে, মাঠের নিচে মৃদু ভূমিকম্পন সৃষ্টি হয়েছিল।
২০২৪-২৫ প্রিমিয়ার লিগে টটেনহ্যাম হটস্পারকে ৫-১ গোলে হারানোর পর এই ঘটনা ঘটে।
খেলা শেষে, লিভারপুলের সমর্থকেরা যখন তাদের প্রিয় দলের জয় উদযাপন করছিলেন, তখন লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা মাঠের কম্পন রেকর্ড করেন।
ভূমিকম্প পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে, গবেষকরা এই কম্পনগুলো নথিভুক্ত করেন।
গবেষণা দলের প্রধান ছিলেন ড. আঁতোয়ান সেপ্টিয়ার, ড. ফারনাজ কামরানজাদ এবং অধ্যাপক বেন এডওয়ার্ডস।
তারা জানান, খেলার সময় হওয়া গোলগুলির পরে, বিশেষ করে সমর্থকদের উচ্ছ্বাস থেকে এই কম্পন তৈরি হয়।
ম্যাচের ২৪ মিনিটে অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের করা গোলের পর সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পন রেকর্ড করা হয়, যা রিখটার স্কেলে ১.৭৪ পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
এছাড়া, মোহামেদ সালার করা গোলের পরে ১.৬০ মাত্রার কম্পন রেকর্ড করা হয়।
কোডি গ্যাকপোর গোলে ১.০৩, ডেস্টিনি উদোগির আত্মঘাতী গোলে ১.৩৫ এবং লুইস ডিয়াজের গোল বাতিল হওয়ার সময় ০.৬৪ মাত্রার কম্পন ধরা পরে।
গবেষক ড. কামরানজাদ বলেন, “ফুটবল ভক্তরা যে ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে, তা কে জানত!
এই পরীক্ষাটি প্রমাণ করে যে বিজ্ঞান সর্বত্র বিদ্যমান, এমনকি অ্যানফিল্ডের গোল-উৎসবের শব্দেও তা লুকিয়ে থাকে।
এটি মনে করিয়ে দেয় যে, ভূপদার্থবিজ্ঞান মানুষের আবেগের শক্তিকে আশ্চর্যজনকভাবে ধারণ করতে পারে।”
গবেষকরা আরও জানান, এই কম্পনগুলো এতটাই সামান্য ছিল যে তা গ্যালারিতে বসা দর্শকদের অনুভব করার মতো ছিল না।
তবে, মাঠের নিচে এর স্পষ্ট এবং স্থায়ী চিহ্ন রয়ে গেছে।
তাদের মতে, প্রতিটি উল্লাস, প্রতিটি উদযাপন, মাঠের নিচে একটি চিহ্ন রেখে যায়, যা যেন সম্মিলিত আনন্দের ভূমিকম্পীয় স্বাক্ষর।
ড. সেপ্টিয়ার যোগ করেন, “এই পরীক্ষাটি ছিল একটি উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা, যা দেখিয়েছে যে বিজ্ঞান একইসঙ্গে আকর্ষণীয় এবং জনসাধারণের কাছে বোধগম্য হতে পারে।
আমি আশা করি, আমাদের কাজটি নতুন প্রজন্মের ভূমিকম্পবিদদের অনুপ্রাণিত করবে এবং বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার প্রতি বৃহত্তর আগ্রহ তৈরি করবে।”
তিনি আরও জানান, এই তথ্য স্টেডিয়ামের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করতে নতুন ধারণা তৈরি করতে পারে।
খেলাধুলা ভালোবাসেন এমন মানুষের আবেগ যে কতটা শক্তিশালী হতে পারে, এই গবেষণা যেন তারই প্রমাণ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান