একটি নতুন খবর: পবিত্র থেকে কলুষিত: ওয়াগনার, বায়রয়েথ এবং পার্সিফাল।
রিচার্ড ওয়াগনারের ‘পার্সিফাল’ অপেরা, যা সঙ্গীতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে, এবার গ্লাইন্ডবোর্ন অপেরা উৎসবে মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে। তবে এর পেছনের গল্পটি বেশ জটিল।
ওয়াগনারের মৃত্যুর পর তাঁর বিধবা স্ত্রী কোসিমা ওয়াগনার চেয়েছিলেন যেন এই অপেরাটি শুধুমাত্র বায়রয়েথ উৎসবে পরিবেশিত হয়, যা ওয়াগনার নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই ইচ্ছাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে অনেক বিতর্ক।
ওয়াগনারের মৃত্যুর কয়েক বছর পর, তাঁর বিধবা স্ত্রী কোসিমা, এই অপেরার স্বত্ব নিজের হাতে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। কারণ তিনি চেয়েছিলেন, এই অপেরা যেন শুধুমাত্র বায়রয়েথেই পরিবেশিত হয়।
কোসিমা জানতেন, একবার যদি ‘পার্সিফাল’-এর স্বত্ব জনসাধারণের হাতে চলে যায়, তাহলে সারা বিশ্বের অপেরা হাউসগুলোতে এটি পরিবেশিত হতে শুরু করবে। এর ফলে বায়রয়েথের একচেটিয়া অধিকার খর্ব হবে।
ওয়াগনারের এই বিখ্যাত অপেরার সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর পরিবারের অনেক ইতিহাস। কোসিমা ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ ফ্রাঞ্জ লিস্টের কন্যা।
তাঁর স্বামী হান্স ভন বুলো ছিলেন একজন বিখ্যাত কন্ডাক্টর। ওয়াগনারের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার পর কোসিমা ব্যাপক সমালোচনার শিকার হন। তিনি ওয়াগনারের মৃত্যুর পর বায়রয়েথ উৎসবের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন এবং এর ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করেন।
তবে, ওয়াগনারের এই অপেরাকে ঘিরে বিতর্কও কম ছিল না। ওয়াগনারের বর্ণবাদী মনোভাবের কারণে তাঁর সৃষ্টিকর্ম আজও সমালোচিত হয়।
তিনি ইহুদি বিদ্বেষী ছিলেন, যা তাঁর কাজের মধ্যে মাঝে মাঝে প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর এই মনোভাবের কারণে অনেকে তাঁর কাজকে প্রত্যাখ্যান করতে চান।
গ্লাইন্ডবোর্নে ‘পার্সিফাল’-এর মঞ্চায়ন একটি বিশেষ ঘটনা, কারণ এটি প্রথমবারের মতো সেখানে পরিবেশিত হচ্ছে। এই অপেরার পরিচালক জেটস্কে মাইনসেন এর চরিত্রগুলোকে দুর্বল মানুষ হিসেবে দেখিয়েছেন।
তিনি মনে করেন, এই অপেরার চরিত্রগুলো তাদের মানবিক দুর্বলতা নিয়েই দর্শকদের সামনে আসে।
অন্যদিকে, লংবরো উৎসবে পরিবেশিত হতে যাচ্ছে আভনার ডরম্যানের লেখা ‘ওয়ানফ্রায়েড’ নামের একটি অপেরা। এই অপেরাটি ওয়াগনার পরিবারের বিতর্কিত দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করে।
ডরম্যান ওয়াগনারের উত্তরাধিকার এবং তৃতীয় রাইখের সঙ্গে এর সম্পর্ক তুলে ধরেন।
‘পার্সিফাল’ এবং ‘ওয়ানফ্রায়েড’-এর মতো অপেরাগুলো শুধু বিনোদনই যোগায় না, বরং শিল্প, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের জটিলতাগুলোকেও তুলে ধরে।
ওয়াগনারের কাজ এবং তাঁর পরিবারের বিতর্কিত ইতিহাস আজও আলোচনা ও বিতর্কের বিষয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান