জিন প্রকৌশল প্রয়োগ করে বিরল রোগ নিরাময়ে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একদল চিকিৎসক। বিরল জিনগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেওয়া এক শিশুর চিকিৎসায় এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই সাফল্যের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও অনেক বিরল রোগের চিকিৎসায় পথ খোলা হলো।
২০২৪ সালের আগস্ট মাসে কেজে (KJ) মালডুন নামক এক শিশু বিরল ‘সিভিয়ার কার্বাময়েল ফসফেট সিনথেটেজ ১’ (CPS1) নামক রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। এই রোগ সাধারণত প্রতি ১৩ লক্ষ শিশুর মধ্যে একজনের হয় এবং আক্রান্ত শিশুদের প্রায় অর্ধেকই জন্মের প্রথম সপ্তাহেই মারা যায়।
যারা বাঁচে, তাদেরও মারাত্মক মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বিলম্ব হয় এবং লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কেজের বাবা-মা, নিকোল এবং কাইল মালডুন, ফিলাডেলফিয়ার চিলড্রেনস হাসপাতালের ‘জিন থেরাপি ফর ইনহেরিটেড মেটাবলিক ডিসঅর্ডার ফ্রন্টিয়ার প্রোগ্রাম’-এর পরিচালক ড. রেবেকা আহরেন্স-নিকলাস এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পেরেলম্যান স্কুল অফ মেডিসিনের অধ্যাপক ড. কিরণ মুসুনুরুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
২০১৩ সাল থেকে এই দুই চিকিৎসক বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুদের জিনগত ত্রুটি সংশোধনের উপায় নিয়ে গবেষণা করছিলেন। এই গবেষণার ফলস্বরূপ, তাঁরা কেজের জন্য বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করতে সক্ষম হন।
চিকিৎসকদের এই প্রচেষ্টা সম্পর্কে কেজের মা নিকোল জানান, “আমরা আমাদের সন্তানের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত ছিলাম।
চিকিৎসকদের এই ধারণা আমাদের মনে আশা জাগিয়েছিল, যা শুধু কেজের জন্যই নয়, আমাদের মতো পরিস্থিতিতে থাকা অন্যান্য পরিবারকেও সাহায্য করবে।”
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, কেজেকে পরীক্ষামূলক চিকিৎসার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। এই থেরাপিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ক্ষুদ্র জিন-এডিটর ব্যবহার করা হয়, যা শিশুর লিভারে ত্রুটিপূর্ণ জিনকে চিহ্নিত করে তা সারিয়ে তোলে।
বর্তমানে কেজেকে মোট তিন ডোজ দেওয়া হয়েছে এবং কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কেজের শারীরিক উন্নতি হচ্ছে এবং তার স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
চিকিৎসক ড. কিরণ মুসুনুরু বলেন, “আমরা চাই প্রত্যেক রোগী এই চিকিৎসার সুবিধা পাক। জিন থেরাপির সাফল্য এখন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে এবং চিকিৎসা পদ্ধতির মোড় ঘুরিয়ে দেবে।”
এই সাফল্যের ফলে, কেজের বাবা-মা তাঁদের সন্তানকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যেতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত।
কেজের বাবা কাইল বলেন, “আমরা অবশেষে সবাই একসঙ্গে থাকতে পারব। কেজে তার ভাইবোনদের সঙ্গে মিশে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই চিকিৎসা পদ্ধতি বিরল রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও অনেক শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।
তথ্য সূত্র: পিপল