ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মা-বাবাকে হারানোর পর, প্রিয়জনের স্মৃতিবিজড়িত পুরোনো বাড়িটি পরিষ্কার করার কঠিন কাজটি এখন সারাহ জ্যাকবসন নামের ২৬ বছর বয়সী এক তরুণীর কাছে এক গভীর শোকের যাত্রা। মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের রেখে যাওয়া জিনিসপত্রগুলো গুছিয়ে রাখতে গিয়ে একদিকে যেমন স্মৃতিগুলো নাড়া দিচ্ছে, তেমনই শোকের গভীরতা অনুভব করছেন তিনি।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে, ৬৩ বছর বয়সে পিত্তথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সারাহ’র মা মারা যান। মায়ের মৃত্যুর তিন বছর আগে তার ক্যান্সার ধরা পড়েছিল।
সারাহ বলেন, “মা ছিলেন আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। তাকে হারানোটা ছিলো খুবই কষ্টের।” মায়ের মৃত্যুর পরপরই তার বাবারও কোলন ক্যান্সার ধরা পরে এবং তিনি ২০২৫ সালের মার্চ মাসে মারা যান, সেসময় তারও বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। এরপর যেন শোকের এক গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যান সারাহ।
মা-বাবার পাশাপাশি তিনি হারিয়েছেন তার দুটি প্রিয় পোষা বিড়ালকেও।
“সবকিছু যেন হঠাৎ করেই এলো। আগে কখনো এমন শোকের অভিজ্ঞতা হয়নি, কখনো শোককে অনুভব করিনি,” তিনি বলেন। এত কষ্টের মাঝেও, বাবা-মায়ের একসঙ্গে স্বর্গে চলে যাওয়ার বিষয়টি তাকে কিছুটা শান্তি এনে দেয়।
“যখন জানতে পারি তারা দু’জন আবার একসঙ্গে, তখন কিছুটা ভালো লাগে,” তিনি যোগ করেন।
কিন্তু এই সান্ত্বনার মাঝেও, পুরনো বাড়িটি পরিষ্কার করার কাজটি যেন তার শোকের সঙ্গে এক কঠিন বোঝাপড়া। এই কাজটি করতে প্রায় এক বছর সময় লাগবে বলে তিনি ধারণা করছেন।
মায়ের ব্যবহার করা অনেক স্মৃতিচিহ্ন, যা তিনি সারাহ এবং তার বোনের জন্য রেখে যেতে চেয়েছিলেন, সেগুলো গুছিয়ে রাখাটা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। “মা তার বিয়ের কিছু জিনিস যত্ন করে তুলে রেখেছিলেন, যা হয়তো তার মেয়েরা ব্যবহার করবে,” সারাহ জানান।
পরিবারের অন্য সদস্যদের সহায়তায়, কোনো কোম্পানিকে দিয়ে কাজটি না করিয়ে, তিনি নিজে এই কাজটি করছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “আমি সবকিছু ধরে রাখতে চাই। প্রতিটি ড্রয়ার, প্রতিটি আলমারি ভর্তি জিনিস, এত স্মৃতি জড়িত যে, আমি সেগুলো হারাতে চাই না।”
তবে বাড়িটি পরিপাটি করার পর, সারাহ ও তার বোন মিলে এটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ তাদের পক্ষে এই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব নয়।
“বাড়িটি খুব সুন্দর একটি এলাকায় অবস্থিত। এটির দাম কয়েক মিলিয়ন ডলার। সেখানে থাকা এবং ট্যাক্স দেওয়া অনেক বেশি ব্যয়বহুল। আমরা বরং ভালো জীবন যাপন করতে চাই, ছোট একটি বাড়িতে থাকব, কিন্তু সেখানে আমাদের নতুন করে জীবন শুরু করার সুযোগ থাকবে। যেখানে আমার পরিবার মারা গেছে, সেই বড় ফাঁকা বাড়িতে আবদ্ধ থাকতে চাই না,” তিনি বলেন।
এ বছর শুরুতে চাকরি হারানোটাও যেন তার জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। কারণ এর ফলে তিনি বাবার সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পেরেছিলেন, তার কাছ থেকে বিদায় নিতে পেরেছিলেন এবং বাড়ি গোছানোর কাজটিও শুরু করতে পেরেছিলেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সারাহকে হাসিখুশি দেখা গেলেও, বাবা-মাকে হারানোর কষ্ট এবং কঠিন পরিস্থিতিগুলো মাঝে মাঝে তাকে খুব অসহায় করে তোলে। “আমি ইন্টারনেটে অন্যদের জন্য শক্তিশালী থাকার চেষ্টা করি, কিন্তু আমি অনেক কষ্ট পাই,” তিনি স্বীকার করেন।
ঘুমের অভাব, প্যানিক অ্যাটাক, বুকে চাপ অনুভব করা এবং অটোইমিউন সমস্যাগুলো তার জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। “আমি বুঝতে পারিনি, আমার শরীরটা আসলে কতটা ভেঙে পড়েছে,” তিনি বলেন।
এই শোক সামাল দিতে তিনি একটি শোকানুষ্ঠান দলে যোগ দিয়েছেন। যা তিনি আরও আগে করতে চেয়েছিলেন।
“যখন আমার মা মারা যান, তখন আমি সঠিকভাবে শোক পালন করতে পারিনি,” সারাহ বলেন। তিনি ধীরে ধীরে সবার থেকে দূরে চলে যাচ্ছিলেন, কিন্তু এবার তিনি একটি কমিউনিটি খুঁজেছেন।
নিজের এই কষ্টের কথা অনলাইনে শেয়ার করার পর, অনেকেই তার সঙ্গে তাদের দুঃখের কথা জানিয়েছেন এবং সমর্থন যুগিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি তার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পারছেন এবং যারা একই ধরনের কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারছেন।
সারাহ জানান, তার স্বামী সবসময় তার পাশে ছিলেন, তিনিই তার সবচেয়ে বড় শক্তি। “আমি সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ আমি তাকে সঠিক সময়ে পেয়েছি। সে আমার মা ও বাবার সঙ্গে মিশেছিল, তাদের সুস্থ জীবন দেখেছে।” স্বামীর উপস্থিতি তাকে কিছুটা হলেও শান্তি এনে দিয়েছে।
শোক প্রকাশ এবং বাড়ির কাজগুলো শেষ করতে সারাহ’র হয়তো অনেক সময় লাগবে, কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন, তিনি অবশ্যই সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং নিজের পথ খুঁজে নেবেন।
“আমি এগিয়ে যেতে চাই। আশা করি, একদিন আমার বাড়ি পরিষ্কার করা হয়ে যাবে, এবং আমি হয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ধরনের পোস্ট দেওয়া বন্ধ করে দেবো… কিন্তু শোক তো সবসময় সঙ্গে থাকে, সারা জীবন,” তিনি বলেন।
তথ্য সূত্র: পিপল