চলতি বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে (Cannes Film Festival) বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা আর ভবিষ্যতের এক উদ্বেগজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। উৎসবের পর্দায় যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তির প্রভাবসহ নানা সংকট গভীরভাবে আলোচনা করা হয়েছে, যা দর্শকদের বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে।
সাধারণত কান চলচ্চিত্র উৎসবকে গ্ল্যামার আর বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে দেখা হয়, তবে এবার যেন বাস্তবতার কঠিন রূপটাই বেশি দেখা গেছে।
মরক্কোর একটি প্রান্তরের পটভূমিতে নির্মিত অলিভার লাক্সের ছবি ‘সিরাত’ (Sirât)-এ যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীর একটি চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছবিতে দুই চরিত্র লুইস এবং তার ছেলে এস্তেবানের মরুভূমির একটি উৎসবে যাওয়ার গল্প বলা হয়েছে, যেখানে তারা তাদের হারিয়ে যাওয়া এক মেয়ের সন্ধান করে।
ছবির গল্পে বর্তমান সময়ের অস্থিরতা এবং ধ্বংসের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যা দর্শকদের হতাশ করে।
অন্যদিকে, অ্যারাই অ্যাস্টারের ‘এডিংটন’ (Eddington) ছবিতে আমেরিকার রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, শেরিফ জো ক্রস মেয়র পদের জন্য লড়ছেন, যেখানে সমাজের বিভেদ এবং বাস্তবতার অভাব স্পষ্ট।
ছবিটি দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে।
কানের এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে ভবিষ্যতের আরও কিছু উদ্বেগজনক চিত্র দেখা গেছে। রাউল পেকের ‘অরওয়েল: ২+২=৫’ (Orwell: 2 + 2 = 5) ছবিতে জর্জ অরওয়েলের ‘১৯৮৪’ উপন্যাসের ধারণা বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
ছবিতে কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিপদ এবং সত্যের অবমূল্যায়ন নিয়ে গভীর আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব নিয়েও বেশ কিছু ছবি তৈরি হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, উগো বিনভেনুর ‘আরকো’ (Arco) ছবিতে ভবিষ্যতের এক বিপর্যস্ত পৃথিবীর ধারণা দেওয়া হয়েছে, যেখানে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
তবে, এই কঠিন বাস্তবতার মাঝেও কিছু ছবিতে আশার আলো দেখা গেছে। রিচার্ড লিংকলেটরের ‘নোভেল ভাগ’ (Nouvelle Vague) এবং ওয়েস অ্যান্ডারসনের ‘দ্য ফিনিশিয়ান স্কিম’ (The Phoenician Scheme) ছবি দুটি দর্শকদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে এবার অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। সের্গেই লোজনিৎসারের ‘টু প্রসিকিউটরস’ (Two Prosecutors) ছবিটি স্তালিনের শাসনের সময়কালের একটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে নির্মিত, যেখানে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
ব্রাজিলের নির্মাতা ক্ল্যাবার মেন্ডনকা ফিলহোর ‘দ্য সিক্রেট এজেন্ট’ (The Secret Agent) ছবিতে ১৯৭৭ সালের ব্রাজিলের সামরিক শাসনের প্রেক্ষাপটে একটি গল্প তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক প্রতিরোধ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চিত্র ফুটে উঠেছে।
এবারের কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভবিষ্যতের সংকটগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণের পাশাপাশি, বর্তমান সময়ের অস্থিরতা এবং মানুষের টিকে থাকার লড়াইকে তুলে ধরা হয়েছে। নির্মাতারা দর্শকদের হতাশ না করে, তাদের মধ্যে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে এবং নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে উৎসাহিত করেছেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)