মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় ঘোষণার ক্ষেত্রে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, যা দেশের প্রথম ধর্মীয় সনদপ্রাপ্ত স্কুল সংক্রান্ত বিতর্কের অবসান ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার, আদালত ৪-৪ ভোটে বিভক্ত হয়ে পড়ায়, ওকলাহোমার একটি প্রস্তাবিত ক্যাথলিক চার্টার স্কুলকে অবৈধ ঘোষণা করে রাজ্যের শীর্ষ আদালতের রায় বহাল রেখেছে।
### মামলার পেছনের ঘটনা
ওকলাহোমার সেই প্রস্তাবিত স্কুলটির নাম সেন্ট ইসিডোর অফ সেভিল ক্যাথলিক ভার্চুয়াল স্কুল। এই স্কুলটি নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, কারণ এটি পাবলিক ফান্ড ব্যবহার করে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে চেয়েছিল। আমেরিকার সংবিধানে, বিশেষ করে প্রথম সংশোধনীতে, গির্জা ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এই সংশোধনী অনুযায়ী, সরকার কোনো নির্দিষ্ট ধর্মকে সমর্থন করতে পারে না।
বিচারকদের মধ্যে অ্যামি কোনি ব্যারেট এই মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি এর কারণ ব্যাখ্যা করেননি, তবে জানা যায়, স্কুলটির আইনজীবীদের সঙ্গে তার আগে থেকেই কিছু সম্পর্ক ছিল। এই কারণে তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
ঐতিহ্যগতভাবে, সুপ্রিম কোর্টের এমন অচলাবস্থা কোনো নজির স্থাপন করে না। অর্থাৎ, এই রায়ের ফলে ওকলাহোমার বাইরের রাজ্যগুলোতেও একই ধরনের স্কুল তৈরি হবে, এমনটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে, বিষয়টি যেহেতু সরাসরি চার্চ ও স্টেটের সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাই এর গুরুত্ব অনেক।
### চার্টার স্কুল কী?
যুক্তরাষ্ট্রে চার্টার স্কুলগুলো হলো সরকারি অর্থে পরিচালিত, কিন্তু বেসরকারি ব্যবস্থাপনার স্কুল। এই ধরনের স্কুলগুলো প্রচলিত সরকারি স্কুলগুলোর থেকে কিছুটা আলাদা। সাধারণত, এগুলো বিশেষ কোনো শিক্ষাব্যবস্থা অনুসরণ করে এবং সরকারি নিয়মনীতির বাইরেও কিছু স্বাধীনতা উপভোগ করে। বর্তমানে, আমেরিকায় প্রায় ৩৮ লক্ষ শিক্ষার্থী এই ধরনের স্কুলে পড়াশোনা করে এবং ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশজুড়ে প্রায় ৮,০০০ চার্টার স্কুল চালু ছিল।
ওকলাহোমার আইন অনুযায়ী, এই স্কুলগুলোও পাবলিক স্কুলের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল, যিনি প্রথমে স্কুলটির পক্ষে ছিলেন, পরে এর বিরোধিতা করেন এবং স্কুলটি বন্ধের জন্য আদালতে মামলা করেন। রাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ নিয়ে রায় দেয় যে, স্কুলটি নির্মাণের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন করে।
### এই রায়ের তাৎপর্য
এই মামলার রায় ঘোষণার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের বিভক্তি, শিক্ষা এবং ধর্মের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রক্ষণশীল বিচারপতিদের একটি অংশ সাধারণত ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে রায় দেন। অন্যদিকে, উদারপন্থী বিচারপতিরা এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের সরকারি অর্থায়নের বিরোধিতা করেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই অচলাবস্থার কারণে ভবিষ্যতে একই ধরনের মামলাগুলোর ক্ষেত্রে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ, আদালত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারায়, বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন