মার্কিন সামরিক বাহিনীতে ‘ডিইআই’ (D&I) কর্মসূচি বাতিল করার যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা আসলে সামরিক ইতিহাসের একটি বড় ভুল পদক্ষেপ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভেদ তৈরি হতে পারে, যা যুদ্ধের ময়দানে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে।
বিশেষ করে, যখন একটি দেশের সামরিক বাহিনীতে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, এবং বর্ণের মানুষ একত্রিত হয়ে কাজ করে, তখন তাদের মধ্যেকার পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সম্মানবোধ যুদ্ধের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, জাপানি নৌবাহিনীর পার্ল হারবার আক্রমণের ঘটনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, এই আক্রমণে মার্কিন সামরিক বাহিনীর দুর্বলতার কারণ ছিল তাদের মধ্যে জাতিগত বৈষম্য এবং ভিন্ন মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব।
তৎকালীন সামরিক নেতৃত্ব, যারা শ্বেতাঙ্গ ছিলেন, তাদের মধ্যে জাপানিদের সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা ছিল। ফলে, তারা আক্রমণের পূর্বাভাসগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেননি।
এমনকী, তাদের মধ্যে ‘গ্রুপ থিংক’-এর (Groupthink) মতো মানসিকতা কাজ করেছিল, যেখানে ভিন্ন মতকে উৎসাহিত করা হতো না।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মানুষের সমন্বয়ে গঠিত সামরিক বাহিনী অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোরিয়া যুদ্ধে লেফটেন্যান্ট রোনান্ড ক্রিসটেনসেনের কথা বলা যায়।
তিনি ছিলেন একজন শ্বেতাঙ্গ ফ্লাইট প্রশিক্ষক। তিনি কৃষ্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণার্থী জেসি লেরয় ব্রাউনকে (Jesse Leroy Brown) সবসময় সমর্থন জুগিয়েছেন।
ব্রাউন পরবর্তীতে নৌবাহিনীর প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ পাইলট হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ভিয়েতনাম যুদ্ধেও এই ধরনের বিভেদ দেখা গিয়েছিল, যেখানে শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গ সৈন্যদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হতো।
ইরাক যুদ্ধের সময়, মার্কিন জেনারেল মার্ক হার্টলিং-এর নেতৃত্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি লক্ষ্য করেন, ইরাকি নারীদের দ্বারা আত্মঘাতী বোমা হামলার সংখ্যা বাড়ছে।
নারীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পুরুষ সৈন্যদের সীমাবদ্ধতা ছিল। তখন একজন নারী অফিসারের পরামর্শে, ইরাকি নারীদের একটি সম্মেলনে একত্রিত করা হয়।
এর ফলে, তারা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা বলতে শুরু করেন। এর ফলস্বরূপ, আত্মঘাতী হামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।
বর্তমানে, মার্কিন সামরিক বাহিনীতে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও সংকট দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মানুষকে একত্রিত করার পরিবর্তে ডিইআই কর্মসূচি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি আত্মঘাতী পদক্ষেপ।
কারণ, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সামরিক বাহিনী শুধুমাত্র যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্যের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং তা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সহমর্মিতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন