উগান্ডায় এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়ন: মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)-এর প্রতিবেদন।
উগান্ডায় সমকামিতা বিরোধী কঠোর আইন প্রণয়নের পর থেকে দেশটির এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন বেড়েছে। মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)-এর সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
২০২৩ সালের ‘সমকামিতা বিরোধী আইন’ (Anti-Homosexuality Act) কার্যকর হওয়ার পর থেকে দেশটির সরকার “ব্যাপক বৈষম্য ও সহিংসতা” চালিয়েছে এবং এলজিবিটি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে “মিথ্যা তথ্য ও ঘৃণা” ছড়িয়েছে বলে এইচআরডব্লিউ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
এই আইনে সমলিঙ্গের মধ্যে সম্মতিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ‘গুরুতর সমকামিতা’র ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
আইনটি কার্যকর হওয়ার পর অধিকার সংস্থাগুলো ও আন্তর্জাতিক সহযোগী দেশগুলো এর তীব্র নিন্দা জানায় এবং তাদের আর্থিক সহায়তা প্রত্যাহার করে নেয়। এইচআরডব্লিউ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকার এই আইনের মাধ্যমে নিপীড়নের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে পুলিশি হয়রানি, চাঁদাবাজি, এবং যৌন অভিমুখিতা বা লিঙ্গপরিচয়ের ভিত্তিতে নির্বিচারে গ্রেপ্তারের মতো ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
এইচআরডব্লিউ-এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই আইন এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের উপর বিদ্যমান নির্যাতন ও বৈষম্যের মাত্রা অভূতপূর্বভাবে বৃদ্ধি করেছে।
প্রতিবেদনে এই আইনের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র এবং এর ফলস্বরূপ উগান্ডার এলজিবিটিকিউ+ ব্যক্তি, কর্মী, সহযোগী এবং তাদের পরিবারের উপর নেমে আসা ধ্বংসাত্মক প্রভাবগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
আইনটি পাশ হওয়ার আগে ও পরে, উগান্ডার সরকারি কর্তৃপক্ষ, যার মধ্যে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও সরকারি ব্যক্তিরাও ছিলেন, তারা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ও ঘৃণা ছড়িয়েছেন।
এর ফলস্বরূপ, তাদের উপর আক্রমণ ও হয়রানির ঘটনা বেড়েছে এবং এলজিবিটিকিউ+ অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এইচআরডব্লিউ-এর আফ্রিকা বিষয়ক গবেষক ওরিয়ম নিয়েকো বলেন, “গত দুই বছর ধরে, এলজিবিটি উগান্ডানরা সরকারের ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা আইন প্রণয়নের কারণে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
উগান্ডা কর্তৃপক্ষের জরুরি ভিত্তিতে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা উচিত, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ দেয় এবং অসংখ্য মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে।”
প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকারদাতাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
তারা জানান, তাদের কাছে নিয়মিত হুমকি ফোন আসত।
তাদের একজন জানান, “তোমরা কোথায় থাকো, কি করো, সব আমরা জানি।”
আরেকজন কর্মী অনলাইনে হুমকির শিকার হওয়ার পর, ২০২৩ সালে তিনজন লোক তার বাড়িতে ঢুকে তাকে মারধর করে এবং তার বন্ধুকে যৌন নির্যাতন করে।
ওই কর্মী এইচআরডব্লিউ-কে জানান, হামলাকারীদের একজন বলেছিল, “তোমাদের কারণে আমি অ্যাঙ্কোলে’র মানুষ হিসেবে লজ্জিত।
আমরা চাইলে তোদের মেরে ফেলতে পারি, কেউ খোঁজও নেবে না।” অ্যাঙ্কোলে উগান্ডার একটি প্রধান জাতিগোষ্ঠী।
আইনটি পাস হওয়ার পর থেকে অন্যান্য উগান্ডান অধিকার সংগঠনও একই ধরনের ঘটনা রিপোর্ট করেছে।
কাম্পালা-ভিত্তিক ডিফেন্ডডিফেন্ডার্সের মতে, আইনটি কার্যকর হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, শারীরিক ও যৌন সহিংসতা, যার মধ্যে ‘সংশোধনমূলক ধর্ষণও’ অন্তর্ভুক্ত, এমন আটটি ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এইচআরডব্লিউ-কে দেওয়া এক কর্মীর ভাষ্যমতে, “সহায়তার জন্য অনুরোধের সংখ্যা ছিল বিপুল।”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রভাবশালী এলজিবিটিকিউ+ সংগঠনগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, যার মধ্যে সংগঠন নিষিদ্ধ করা, কর্মীদের গ্রেপ্তার এবং কুইয়ার ক্লায়েন্টদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীদের হয়রানির মতো ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
এইচআরডব্লিউ সরকারি, আইন বিষয়ক ও পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া পায়নি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা।