বুরুন্ডিতে খাদ্য সংকটে ভুগছেন কঙ্গোর শরণার্থীরা, সাহায্য হ্রাসের ফলে বাড়ছে দুর্ভোগ।
কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (DRC) থেকে আসা শরণার্থীরা বুরুন্ডিতে চরম খাদ্য সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক খাদ্য সহায়তা কমে যাওয়ায় তারা অনাহার ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
উত্তরাঞ্চলের একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া ক্লদ নামের এক ব্যক্তি জানান, “এখানে আসার সময় মাসে সাড়ে তিন কেজি চাল পাওয়া যেত। এখন তা এক কেজিতে নেমে এসেছে। তিন কেজি মটরশুঁটির বদলে এখন পাচ্ছি মাত্র ১.৮ কেজি। টমেটো সস যা পাই, তা একদিনও টেকে না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্লদ আরও জানান, খাবারের অভাবে অনেক সময় প্রতিবেশীর তাঁবুতে হানা দিচ্ছে কিছু লোক। এছাড়া, সেখানে বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনাও বাড়ছে।
বুরুন্ডির মুসেনিয়ি শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ মানুষ বাস করছে। গত জানুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি কঙ্গোলিজ শরণার্থী এখানে আশ্রয় নিয়েছে।
খাদ্য সঙ্কটের পাশাপাশি সাহায্য কমে যাওয়ায় যৌন সহিংসতার শিকার হওয়া নারীদের জন্য সহায়তা প্রদানও বন্ধ হয়ে গেছে।
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বুরুন্ডির প্রধান জিওফ্রে কিরেঙ্গা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, “অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা এখন অনিবার্য হয়ে উঠছে।”
জাতিসংঘের তথ্যমতে, খাদ্য সংগ্রহের জন্য অনেক কঙ্গোলিজ শরণার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নিজ দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) মার্চ মাস থেকে খাদ্য সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে এবং জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন করে সহায়তা না পেলে নভেম্বরের মধ্যে সব ধরনের সাহায্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
মুসেনিয়ি শরণার্থী শিবিরের উপ-প্রশাসক অস্কার নিয়িবিজি খাদ্য বিতরণে এই সংকটকে একটি “বড় চ্যালেঞ্জ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি শরণার্থীদের কাছাকাছি জমি চাষ করার আহ্বান জানিয়েছেন, তবে তাদের মতে, বাইরের সাহায্য এখনো অত্যন্ত জরুরি।
শরণার্থী শিবিরে খাদ্য সহায়তা কমার কারণ হিসেবে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার তাদের সাহায্য বাজেট ৮০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে।
অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোও অনুদান হ্রাস করেছে। ফলে অনেক এনজিও (NGO) এবং জাতিসংঘের সংস্থা তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।
কঙ্গোতে চলমান সংঘাতের কারণে শরণার্থীরা বুরুন্ডিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। রুয়ান্ডা সমর্থিত এম২৩ গোষ্ঠীর অগ্রযাত্রার কারণে সেখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে সাহায্য কমে যাওয়ায় সেখানকার শরণার্থীদের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। সাহায্য অব্যাহত না থাকলে মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা