বিমান সংস্থাগুলির আনুগত্য প্রকল্পগুলি কি সত্যিই লাভজনক?
বর্তমানে আকাশ পথে ভ্রমণের চাহিদা বাড়ছে, এবং এর সাথে বাড়ছে বিভিন্ন বিমান সংস্থাগুলির গ্রাহক আনুগত্য প্রকল্পগুলির (loyalty schemes) জনপ্রিয়তা। এই প্রকল্পগুলির মূল উদ্দেশ্য হল গ্রাহকদের ধরে রাখা এবং তাদের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করা।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এই স্কিমগুলি কি সত্যিই গ্রাহকদের জন্য উপকারী, নাকি এটি কেবল বিমান সংস্থাগুলির মুনাফা অর্জনের একটি কৌশল? এই বিষয়টি নিয়েই আজকের আলোচনা।
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ (British Airways), যারা সাধারণত যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপে ভ্রমণকারীদের কাছে জনপ্রিয়, সম্প্রতি তাদের গ্রাহক আনুগত্যের নিয়মে কিছু পরিবর্তন এনেছে। তারা তাদের ‘এক্সিকিউটিভ ক্লাব’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘ক্লাব’ রেখেছে এবং পুরষ্কার প্রদানের পদ্ধতিতে এনেছে নতুনত্ব।
আগে, গ্রাহকরা তাদের টিকিটের শ্রেণি এবং ভ্রমণের দূরত্বের উপর ভিত্তি করে অ্যাভিয়স (Avios) এবং টিয়ার পয়েন্ট (Tier points) পেতেন। এই পয়েন্টগুলি গ্রাহকদের বিশেষ সুবিধা দিত, যেমন বিনামূল্যে লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগ।
কিন্তু নতুন নিয়মানুযায়ী, এখন থেকে গ্রাহকদের প্রতি পাউন্ড খরচের ভিত্তিতে টিয়ার পয়েন্ট দেওয়া হবে।
এর ফলে, গ্রাহকদের একই সুবিধা পেতে হলে আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রোঞ্জ স্ট্যাটাস পেতে হলে বছরে প্রায় ৩৫০০ পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা) খরচ করতে হবে।
এই পরিবর্তনের ফলে অনেক গ্রাহক ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের প্রতি তাদের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। অনেকে বলছেন, এখন এই স্কিমের সুবিধাগুলি আগের মতো নেই।
এমন পরিস্থিতিতে, অন্য কোনো বিমান সংস্থার আনুগত্য প্রকল্পে নাম লেখানো যায় কিনা, সেই বিষয়ে অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন।
কিন্তু অন্য কোনো স্কিমে যাওয়া সব সময় সহজ নাও হতে পারে। অনেক এয়ারলাইন্স তাদের প্রোগ্রামের মাধ্যমে সুবিধা পেতে হলে বছরে নির্দিষ্ট সংখ্যকবার তাদের সাথে ভ্রমণ করতে হয়।
এছাড়াও, আপনি যদি এমন কোনো গন্তব্যে যেতে চান যেখানে সেই এয়ারলাইন্সটির ফ্লাইট নেই, তবে সেই স্কিম আপনার জন্য তেমন উপযোগী নাও হতে পারে।
তবে, শুধু ব্রিটিশ এয়ারওয়েজই নয়, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আর্থিক চাপের কারণে আরও অনেক বিমান সংস্থাই তাদের আনুগত্যের নিয়মে পরিবর্তন আনছে।
উদাহরণস্বরূপ, স্প্যানিশ বিমান সংস্থা ইবেরিয়া (Iberia), যা ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মূল সংস্থা আইএজি (IAG)-এর একটি অংশ, তারাও তাদের স্কিমে পরিবর্তন এনেছে। এছাড়া, কান্তাস (Qantas) এবং লুফথানসা (Lufthansa) -এর মতো সংস্থাগুলিও ২০২৩ সালের মধ্যে তাদের স্কিমে পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, বিমান সংস্থাগুলি তাদের প্রোগ্রামগুলির মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে আরও বেশি মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করছে। এর কারণ হল, আনুগত্য প্রকল্পগুলি শুধুমাত্র গ্রাহকদের ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি তাদের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসায়ও পরিণত হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, আইএজি-এর অধীনে পরিচালিত অ্যাভিয়স (Avios) ২০২৩ সালে ৪২০ মিলিয়ন পাউন্ড লাভ করেছে।
অন্যদিকে, যারা খুব বেশি ভ্রমণ করেন না, তাদের জন্য এই স্কিমগুলি ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাদের জন্য ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বোনাস পয়েন্ট অর্জন করা একটি ভালো উপায় হতে পারে।
এছাড়াও, বিভিন্ন অনলাইন শপিংয়ের মাধ্যমেও পয়েন্ট সংগ্রহ করার সুযোগ থাকে।
পয়েন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন, প্রিমিয়াম ক্লাসের টিকিট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে পয়েন্ট ব্যবহার করলে ভাল সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।
এছাড়া, আগে থেকে টিকিট বুকিং করলে অনেক সময় ভালো অফার পাওয়া যায়।
তবে, বিমান সংস্থাগুলি তাদের আনুগত্য প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে চায়।
তাই, তারা তাদের স্কিমে নতুন সদস্যদের জন্য আকর্ষণীয় কিছু সুবিধা যোগ করে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ তাদের ক্লাবের সদস্যদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা দেয়, যার মাধ্যমে তারা ফ্লাইটের সময় টেক্সট মেসেজ এবং ইমেল আদান-প্রদান করতে পারে।
সুতরাং, বিমান সংস্থাগুলির আনুগত্য প্রকল্পগুলি গ্রাহকদের জন্য কতটা লাভজনক, তা নির্ভর করে তাদের ভ্রমণের ধরনের উপর। যারা নিয়মিত ভ্রমণ করেন, তাদের জন্য এই স্কিমগুলি বিভিন্ন সুবিধা দিতে পারে।
তবে, প্রত্যেক গ্রাহকের উচিত তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেরা অফার খুঁজে বের করা।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক