জুন মাসে রাতের আকাশে দেখা মিলবে নানান দৃশ্যের, যা আকাশের দিকে তাকাতে উৎসাহ যোগাবে। এই মাসে, উজ্জ্বল গ্রহ থেকে শুরু করে নক্ষত্রপুঞ্জ এবং উল্কাপাত পর্যন্ত অনেক কিছুই উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে।
যারা মহাকাশ ভালোবাসেন, তাদের জন্য জুন মাস হতে চলেছে বেশ আকর্ষণীয়। আসুন, জেনে নিই জুন মাসের উল্লেখযোগ্য কিছু মহাজাগতিক ঘটনার কথা।
১লা জুন তারিখে, শুক্র গ্রহ তার উজ্জ্বলতা নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসবে। একে পশ্চিম প্রান্তীয় বিস্তার (greatest western elongation) বলা হয়।
এই সময়ে সূর্যের আলোয় ঢাকা না থাকার কারণে শুক্র গ্রহকে ভালোভাবে দেখা যাবে। ভোরের আকাশে খালি চোখেই এটি দেখা যেতে পারে।
২রা জুন তারিখে, রাতের আকাশে দেখা যাবে “বিখ্যাত” গোলীয় স্তবক (globular cluster)। এই সময়, “Great Hercules Cluster” বা “Messier 13” তার সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকবে।
১700 শতকে এডমন্ড হ্যালি এই নক্ষত্রপুঞ্জ আবিষ্কার করেন। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য নিলে, আকাশে উজ্জ্বল তারার এই সমাবেশ আরও ভালোভাবে দেখা যাবে।
৭ই জুন তারিখে, দিনের বেলায় “Arietid” উল্কাবৃষ্টির চরম মুহূর্ত আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও দিনের বেলায় উল্কাপাত হওয়ায় তা দেখা কঠিন, তবে ভোরের আকাশে কিছু উজ্জ্বল তারা দেখা যেতে পারে।
নাসা’র (NASA) Meteor Shower Portal-এ এই দিনের কার্যকলাপ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
১১ই জুন, আকাশে দেখা যাবে “স্ট্রবেরি মুন” (Strawberry Moon)। এই পূর্ণিমার চাঁদ-এর এমন নামকরণের কারণ হলো উত্তর আমেরিকার আদিবাসী সংস্কৃতি।
জুন মাসে বুনো স্ট্রবেরি ফল পাকে, তাই এই সময়ে হওয়া পূর্ণিমার চাঁদকে “স্ট্রবেরি মুন” নামে ডাকা হয়। ইউরোপের কিছু অঞ্চলে এই সময়ে মধু সংগ্রহের উৎসব হয়, তাই এই পূর্ণিমাকে “Mead Moon” বা “Honey Moon” নামেও ডাকা হয়।
১৬ই জুন তারিখে, মঙ্গল গ্রহ (Mars) এবং “Regulus” নক্ষত্রের কাছাকাছি আসার দৃশ্য দেখা যাবে। সন্ধ্যার আকাশে সূর্যাস্তের প্রায় ৯০ মিনিট পর এই দৃশ্য দেখা যাবে।
Regulus আসলে চারটি তারার একটি ব্যবস্থা, তবে টেলিস্কোপের মাধ্যমে এর মধ্যে তিনটি তারা দেখা যেতে পারে। এছাড়াও, রাতের আকাশে “Butterfly Cluster” তারার ঝাঁক তার সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকবে, যা বাইনোকুলারের সাহায্যে ভালোভাবে দেখা যাবে।
২২শে জুন তারিখে, “Lagoon Nebula” বা “Messier 8” তার সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকবে। এটি একটি বিশাল গ্যাসীয় মেঘ, যেখানে নতুন তারা জন্ম নেয়।
এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৫,২০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। সাধারণত, উত্তর গোলার্ধের মাঝামাঝি স্থান থেকে খালি চোখে এটি দেখার সম্ভাবনা থাকে।
তবে, ভালো দৃশ্য উপভোগ করার জন্য বাইনোকুলার অথবা টেলিস্কোপ ব্যবহার করা যেতে পারে।
২৫শে জুন তারিখে, অমাবস্যার কারণে রাতের আকাশ অনেক পরিষ্কার থাকবে। এই সময়ে, রাতের আকাশে ক্ষীণ আলোযুক্ত গ্যালাক্সি এবং নীহারিকা দেখা সহজ হবে।
যারা ছবি তুলতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি একটি দারুণ সুযোগ। বিশেষ করে, গ্রীষ্মকালে রাতের আকাশে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্র দেখা যায়, যা ছবি তোলার জন্য উপযুক্ত।
২৭শে জুন তারিখে, “Bootid” উল্কাবৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সময়ে আকাশে অল্প আলো থাকার কারণে দুর্বল উল্কাগুলোও ভালোভাবে দেখা যাবে।
জুন মাসের শেষ দিন, অর্থাৎ ৩০শে জুন তারিখে, চাঁদ এবং মঙ্গল গ্রহের কাছাকাছি আসার দৃশ্য দেখা যাবে। খালি চোখে বা বাইনোকুলারের সাহায্যে এদের একসঙ্গে দেখা যেতে পারে।
এছাড়াও, এই সময়ে চাঁদের আলোকিত অংশে পৃথিবীর আলো প্রতিফলিত হয়ে “earthshine” নামক একটি দৃশ্য তৈরি হয়, যা রাতের আকাশে এক ভিন্ন সৌন্দর্য যোগ করে।
আশা করা যায়, এই মাসটি মহাকাশ প্রেমীদের জন্য বেশ আনন্দদায়ক হবে। আপনারা সবাই আকাশ পর্যবেক্ষণ করুন এবং প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করুন।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক