আফ্রিকার মাটিতে মানবজাতির আদি ইতিহাস, শিশুদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলেন শিল্পী নিকোলাস স্মিথ।
ছোট্ট শিশুদের জন্য আফ্রিকার মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় নিয়ে এসেছেন লেখক ও চিত্রশিল্পী নিকোলাস স্মিথ। তাঁর নতুন বই ‘দ্য হিস্টরি অফ উই’ (The History of We) – তে আদিম মানুষের বিবর্তন এবং আফ্রিকার মানুষের সংস্কৃতি ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে তুলে ধরা হয়েছে। বইটিতে খ্রিস্টপূর্ব ২ লক্ষ ৩৩ হাজার বছর থেকে শুরু করে খ্রিস্টপূর্ব ৯০ হাজার বছর পর্যন্ত সময়কালের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
এই সময়কালে কীভাবে মানুষ গান তৈরি করতে শিখেছিল, ভাষার জন্ম হয়েছিল, স্থাপত্য ও চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সূচনা হয়েছিল, সেই সব কিছুই লেখক সহজ ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন।
আফ্রিকার মানুষের এই আদি ইতিহাস সাধারণত আমাদের আলোচনার বাইরেই থেকে যায়। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব পায় না। এই প্রেক্ষাপটেই নিকোলাস স্মিথ-এর এই কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি তাঁর বইটিতে দেখিয়েছেন, কীভাবে মানুষ ধীরে ধীরে নিজেদের জীবন ধারণের কৌশল তৈরি করেছিল। শুধু তাই নয়, তাঁদের সংস্কৃতি, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিকও তুলে ধরেছেন তিনি।
নিকোলাস স্মিথ-এর মতে, এই বইটি লেখার অনুপ্রেরণা এসেছে ‘দ্য ১৬১৯ প্রজেক্ট: বর্ন অন দ্য ওয়াটার’ (The 1619 Project: Born on the Water) বইটি থেকে। এই বইটি লেখার সময় তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে নতুন করে জানার সুযোগ পান।
বইটির বিষয়বস্তু এবং চিত্রকলার মাধ্যমে তিনি শিশুদের মধ্যে আফ্রিকার ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি করতে চেয়েছেন।
গবেষণার প্রসঙ্গে লেখক জানান, এই সময়কালের তথ্য সংগ্রহ করাটা একদিকে যেমন কঠিন ছিল, তেমনই সহজও ছিল। কারণ, এই বিষয়ে প্রচুর বই ও নথি পাওয়া যায়। তিনি বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণাপত্র, যেমন মেরি লিকির (Mary Leakey) ‘দ্য সেডিমেন্টস অফ টাইম’ বইটির সাহায্য নিয়েছেন।
এমনকি, বইটির বিষয়বস্তু সঠিক কিনা, তা যাচাই করার জন্য লিকি পরিবারের সহায়তাও নেওয়া হয়েছে।
নিকোলাস স্মিথ মনে করেন, এই ধরনের বই শিক্ষাব্যবস্থায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কারণ, আমাদের পাঠ্যবইগুলোতে মানব সভ্যতার আদি ইতিহাস এবং আফ্রিকার অবদানকে সেভাবে তুলে ধরা হয় না।
তাঁর মতে, এই বইয়ের মাধ্যমে শিশুরা তাদের পরিবারের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে, যা আসলে সমগ্র মানবজাতির ইতিহাস।
বইটি লেখার ক্ষেত্রে শিল্পী হিসেবে তাঁর নিজস্ব শৈলী ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন নিকোলাস। ব্লম্বোস গুহার (Blombos Cave) আদিম শিল্পীদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কীভাবে তাঁরা পাথর ও মাটি ব্যবহার করে ছবি আঁকতেন, সেই বিষয়টি তাঁকে এই বইয়ের চিত্রগুলো তৈরি করতে উৎসাহিত করেছে।
তিনি তাঁর ক্যানভাসে রং, পাতা, এবং হাতের আঙুলের ব্যবহারের মাধ্যমেjoy, fear, এবং exploration-এর মতো অনুভূতিগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন।
এই বইটি শুধু শিশুদের জন্য নয়, বরং সব বয়সের মানুষের জন্যই শিক্ষামূলক হতে পারে। লেখক মনে করেন, এই বইয়ের ভাষা কিছুটা কাব্যিক, যা শিশুদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করবে।
একইসঙ্গে, বড়রাও এই বইটির মাধ্যমে তাঁদের পরিবারের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।