ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা আবারও নতুন মোড় নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘাত বেড়ে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে।
উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে এবং এর ফলস্বরূপ, এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে।
১৯৬০-এর দশকে ইরানের তেহরান গবেষণা চুল্লী স্থাপনের মাধ্যমে এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়, যা ছিল আমেরিকার ‘শান্তির জন্য পরমাণু’ প্রকল্পের অংশ। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসরায়েলকে প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ত হতে থাকে।
২০০০-এর দশকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। পশ্চিমা বিশ্ব জানতে পারে যে ইরান গোপনে নাতানজে পরমাণু স্থাপনা তৈরি করছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে ইরানের আলোচনা শুরু হয়, যা দীর্ঘকাল ধরে চলে। ২০০৬ সালে ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুনরায় চালু করার ঘোষণা দিলে আলোচনা ভেস্তে যায়।
২০১০ সালে ‘স্টাক্সনেট’ নামে একটি কম্পিউটার ভাইরাস আবিষ্কার হয়, যা ইরানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ধারণা করা হয়, এই ভাইরাসটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ সৃষ্টি।
২০১৫ সালে বিশ্বশক্তিগুলোর সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন। এরপর থেকে ইসরায়েল ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে দুর্বল করতে গোপনে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।
২০২০ সাল থেকে ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা জোরদার করে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে নাতানজের পরমাণু কেন্দ্রে একটি রহস্যজনক বিস্ফোরণ ঘটে, যার জন্য ইরান ইসরায়েলকে দায়ী করে।
একই বছর নভেম্বরে ইরানের শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেকে হত্যা করা হয়। ২০২১ সালে নাতানজের ভূগর্ভস্থ পরমাণু কেন্দ্রে সাইবার হামলা চালানো হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালালে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। ইরান হামাসকে সমর্থন জোগায়, যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
এরপর ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সরাসরি সামরিক হামলা শুরু হয়।
২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ইরানের একটি গ্যাস পাইপলাইনে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করা হয়।
১ এপ্রিল, সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত ইরান কনস্যুলেটে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সদস্যসহ ১৬ জন নিহত হন।
এর প্রতিক্রিয়ায় ১৪ এপ্রিল ইরান ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে।
ইসরায়েল সরাসরি ইরানের অভ্যন্তরে হামলা চালাচ্ছে এবং ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। ইরানও এর প্রতিশোধ নিচ্ছে।
বর্তমানে, এই অঞ্চলে যুদ্ধের সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে। উভয় দেশই তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে এবং একে অপরের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘাত বন্ধের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।