যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে (US Open) কঠিন লড়াই, গল্ফার ফিলিপ বারবারে ও তাঁর ক্যাডি-স্ত্রী’র সাফল্যের গল্প

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কঠিন গলফ কোর্সগুলোর একটি হলো ওকমন্ট কান্ট্রি ক্লাব। সেখানে এবারের ইউএস ওপেনে (US Open) কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে গিয়েও বাজিমাত করেছেন তরুণ গল্ফার ফিলিপ বারবারে। তাঁর এই সাফল্যের অন্যতম কারণ তাঁর স্ত্রী ক্লো বারবারে, যিনি একইসঙ্গে তাঁর ক্যাডি (caddie) হিসেবে সবসময় পাশে ছিলেন। এই দম্পতির গল্প এখন ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে এক অনুপ্রেরণা।

ওকমন্টের মতো কঠিন একটি কোর্সে খেলাটা যে কোনো গল্ফারের জন্য বেশ কঠিন। এমনকি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ব্রাইসন ডিচাম্বোর মতো তারকাও এখানে সুবিধা করতে পারেননি। তবে লুইজিয়ানার (Louisiana) ২৭ বছর বয়সী ফিলিপ বারবারে যেন অন্য ধাতুতে গড়া। ফাইনাল কোয়ালিফাইং রাউন্ড পেরিয়ে তিনি যখন মূল পর্বে জায়গা করে নিলেন, তখন তাঁর চোখেমুখে ছিল সীমাহীন আনন্দ। আর এই আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্য তাঁর পাশে ছিলেন তাঁর স্ত্রী, সেরা বন্ধু এবং ক্যাডি ক্লো।

গত বছরই ফিলিপ এবং ক্লো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। ক্লো নিজে গল্ফ খেলেন না, তবে স্বামীর খেলাকে ভালোবেসে তাঁর ক্যারিয়ারে সবসময় পাশে থেকেছেন। ফিলিপ বলেন, “ক্লো আমার ভালো বন্ধু, সবসময় আমার পাশে থাকে। সে আমার খেলাটাকে অন্যভাবে দেখে, যা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমি যখন একা খেলি, তখন অনেক কিছুই হয়তো খেয়াল করি না, কিন্তু ক্লো’র পরামর্শ আমাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।”

ক্লো’র মতে, তিনি ফিলিপকে মানসিক সমর্থন দিতে সবসময় প্রস্তুত থাকেন। তিনি বলেন, “আমি সবসময় তাকে বলি, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজের খেলাটা খেলো। তুমি জানো তুমি কী পারো। আমি বুঝি, এই কঠিন পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখাটা খুব জরুরি।”

বারবারেকে এক দশক আগে জুনিয়র অ্যামেচার ইভেন্টে জয়ী হতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু পেশাদার গল্ফ জগতে ভালো ফল করাটা তাঁর জন্য সহজ ছিল না। ২০১৮ সালের টুর্নামেন্টে তিনি ভালো করতে পারেননি। তাই এবার যখন তিনি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেলেন, তখন তাঁর উচ্ছ্বাস ছিল বাঁধনহারা। শনিবার সকালে শেষ হওয়া খেলায় ৫ ফুটের (১.৫ মিটার) একটি পার (par) বাঁচিয়ে তিনি যখন পরবর্তী রাউন্ডের টিকিট নিশ্চিত করেন, তখন যেন তাঁর জীবনের অনেক বড় একটা স্বপ্ন পূরণ হলো।

বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, বারবারে সহ আরও ১৩ জন খেলোয়াড়কে পরের দিন সকালে তাঁদের খেলা শেষ করতে হয়। দিনের শুরুতে একটি বোগি (bogey) করার পর, তিনি জানতেন যে কঠিন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে তাঁকে সেরাটা দিতে হবে। এই বিষয়ে ফিলিপ বলেন, “আমি জানতাম, দিনের শুরুতে কঠিন একটি হোল (hole) খেলতে হবে এবং সেখানে পার করতে হবে। আর সেটাই আমি করে দেখিয়েছি। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে পার করতে পারাটা সত্যিই বিশেষ কিছু ছিল। আর আমার পাশে যখন আমার স্ত্রী ছিল, তখন যেন সবকিছু আরও সহজ হয়ে গিয়েছিল।”

ক্লো জানান, তাঁর স্বামী সবসময় চেষ্টা করেন তাঁর ব্যাগটিকে হালকা রাখতে। তবে তাঁর মতে, ব্যাগটি এখনো বেশ ভারী। তিনি বলেন, “আমি সবসময় তাঁর পাশে থাকতে পছন্দ করি, তাঁকে উৎসাহ দিতে পারি। একসঙ্গে ভ্রমণ করাটাও দারুণ। কারণ, সে একা থাকলে হয়তো এত ভালো করতে পারত না।”

এই টুর্নামেন্টটি ফিলিপের জন্য ছিল এক আবেগপূর্ণ অভিজ্ঞতা। কারণ, তিনি প্রথম দিকে কাঙ্ক্ষিত ফল করতে পারেননি। এরপর তিনি ধীরে ধীরে খেলায় ফিরে আসেন এবং অসাধারণ কিছু মুহূর্ত তৈরি করেন। তৃতীয় রাউন্ডে তিনি ৭৫ স্কোর করেন এবং টুর্নামেন্ট শেষে তাঁর মোট স্কোর ছিল ১২ ওভার পার।

সাফল্যের পেছনে স্ত্রীর অবদান স্বীকার করে ফিলিপ তাঁর সামাজিক মাধ্যমে একটি আবেগপূর্ণ পোস্ট করেন। যেখানে তিনি ক্লোকে ধন্যবাদ জানান। সম্প্রতি, এক অনুষ্ঠানে ফিলিপ তাঁর স্ত্রীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান, যখন ক্লো ৯,৪০০ ফুট উচ্চতায় (প্রায় ২,৮৬৫ মিটার) একদিনে ৩৩টি হোলে তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

ক্লো’র সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে, ফিলিপের গল্ফ ক্যারিয়ার তেমন উজ্জ্বল ছিল না। একসময় তিনি খেলা চালিয়ে যাবেন কিনা, সেই বিষয়েও দ্বিধায় ছিলেন। তিনি বলেন, “পেশাদার গল্ফ খুবই কঠিন। সঠিক মানুষ পাশে থাকলে অনেক সুবিধা হয়। আমার একটি ভালো পরিবার আছে, ভালো একজন স্ত্রী আছে, এবং তাঁর পরিবারও আমাকে সবসময় সমর্থন করে। ক্লো যখন ক্যাডি হিসেবে আমার সঙ্গে যোগ দেয়, তখন মনে হয়েছিল যেন আমি একা নই। কারণ, একা ভ্রমণ করা এবং সবকিছু একা সামলানো কঠিন। তবে আমার স্ত্রী পাশে থাকলে অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে।”

২০২১ সালে ফিলিপ বাবার একটি স্টেক হাউসে (steakhouse) কাজ করতেন। সেই সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “ওকমন্টের চেয়ে আমার বাবার স্টেক হাউসে কাজ করাটা কোনো অংশে কম কঠিন ছিল না। সেখানে দুই দিনের মধ্যে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম, হাতেও চোট লেগেছিল। তাই আমি দ্রুত গল্ফ কোর্সে ফিরতে চেয়েছিলাম।”

বর্তমানে ফিলিপের এই সাফল্যের সাক্ষী থাকল বিশ্ব। ভবিষ্যতে এই জয় তাঁর জীবনে আরও অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসবে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন