যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য কাটছাঁটের ফলে মারাত্মক ক্ষতিকর টিবি রোগের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা
বিশ্বজুড়ে যক্ষ্মা (টিবি) রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে এই রোগ প্রতিরোধের প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই পদক্ষেপের কারণে হয়তো এমন এক ধরনের টিবি’র উদ্ভব হতে পারে, যা কোনো চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো সম্ভব হবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই আকস্মিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার ফলে টিবি প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়বে। এতে কয়েক দশকের অর্জিত সাফল্য যেমন হুমকির মুখে পড়বে, তেমনি লাখ লাখ মানুষের জীবনও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। টিবি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিয়োজিত সংস্থা ‘স্টপ টিবি পার্টনারশিপ’-এর প্রধান ড. লুসিকা দিটিউ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, চিকিৎসার অভাবে রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং এর ফলে টিবি’র জীবাণু নতুন রূপ নিতে পারে, যা আগের চেয়ে আরও বেশি মারাত্মক হবে।
যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত গরিব দেশগুলোকে টিবি’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বছরে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তারা এখন এমন একটি কৌশল গ্রহণ করতে চাইছে, যেখানে তাদের দেওয়া প্রতিটি ডলার, প্রতিটি প্রকল্পের অর্থ এবং প্রতিটি নীতি-নির্ধারণী পদক্ষেপ—সবকিছুই আমেরিকার নিরাপত্তা, শক্তি এবং সমৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক হবে।
ড. দিটিউ বলেন, “টিবি প্রতিরোধের কার্যক্রম বন্ধ করলে এর কোনোটিই অর্জিত হবে না। কারণ টিবি একটি বায়ুবাহিত রোগ। একে সীমান্ত দিয়েও আটকানো সম্ভব নয়। শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে এটি ছড়ায়। শুধু টিবি নয়, ওষুধ প্রতিরোধী টিবি এবং চরম ওষুধ প্রতিরোধী টিবি’রও সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি আরও যোগ করেন, “বর্তমানে চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হলে হয়তো নতুন ধরনের টিবি’র জন্ম হবে, কারণ অনেক রোগীর চিকিৎসা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাবে, আবার অনেকের রোগ নির্ণয়ও করা যাবে না।
২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে ১ কোটি ৮ লক্ষ মানুষ নতুন করে টিবি’তে আক্রান্ত হয়েছিল এবং মারা গিয়েছিল প্রায় ১২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে এই রোগ নির্মূল করা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য বন্ধের আগে থেকেই এই লক্ষ্য অর্জনে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি ছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশে টিবি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ অনেক দেশেরই এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো পর্যাপ্ত সম্পদ নেই।
কোভিড-১৯ মহামারীর সময় চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয়ে ব্যাঘাত ঘটার কারণে চিকিৎসকরা রোগীদের মধ্যে টিবি’র জটিল রূপ দেখতে পান। ড. দিটিউয়ের মতে, দরিদ্র এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই ধরনের পরিস্থিতি আরও বেশি দেখা যেতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা দেখি, তাহলে টিবি এখনো একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষ টিবি’তে আক্রান্ত হন এবং এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীর মৃত্যু হয়। বিশ্বজুড়ে টিবি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া পদক্ষেপগুলো দুর্বল হয়ে পড়লে, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্যও উদ্বেগের কারণ হবে। কারণ, এতে নতুন করে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়বে এবং রোগ প্রতিরোধের চলমান প্রচেষ্টাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ড. দিটিউ মনে করেন, এখন প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। বিশেষ করে আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংক এবং বিশ্ব ব্যাংকের মতো সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে, সাহায্য কাটছাঁটের কারণে অনেক মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান