শিরোনাম: পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে বাড়ছে শিশু হতাহতের ঘটনা, বলছে মানবাধিকার সংস্থা
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অভিযানে ফিলিস্তিনি শিশুদের ওপর সহিংসতার উদ্বেগজনক চিত্র। মানবাধিকার সংস্থা ‘বি’Tসেলেম’-এর প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, গাজা যুদ্ধের পর থেকে এই অঞ্চলে সামরিক তৎপরতা বেড়েছে, যার ফলশ্রুতিতে বাড়ছে শিশু হতাহতের সংখ্যা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় হামাস-এর আক্রমণের পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময়ের চেয়েও বেশি। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, নিহতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বি’Tসেলেম-এর সংগৃহীত দুই দশকের বেশি সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
সংস্থাটি জানায়, গত কয়েক মাসে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সামরিক কৌশল গাজার পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। সেখানকার শরণার্থী শিবিরগুলোতে ব্যাপক সেনা অভিযান চালানো হচ্ছে, যা সেখানকার অধিবাসীদের জন্য চরম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনটি শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়ে ৪০ হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের পর এটিই সবচেয়ে বড় ধরনের স্থানান্তরের ঘটনা।
গাজায় আন্তর্জাতিক আইনকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে। একই ঘটনা এখন পশ্চিম তীরেও দেখা যাচ্ছে। গাজার তুলনায় এখানে সহিংসতার মাত্রা কিছুটা কম হলেও, নির্বিচারে মানুষ হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।
প্রতিবেদনে কয়েকটি দুঃখজনক ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। ১৪ বছর বয়সী আহমাদ রশিদ জাজার নামের এক কিশোরকে গত ১৯ জানুয়ারি সাবাস্তিয়া গ্রামে দোকানে রুটি কিনতে যাওয়ার সময় গুলি করে হত্যা করা হয়। এছাড়া, গত বছরের ৩ অক্টোবর তুলকার্মে একটি ক্যাফেতে বিমান হামলায় নিহত হয় আট ও পাঁচ বছর বয়সী দুই শিশু—শাম আবু জাহারা ও কারাম আবু জাহারা। হামলায় তাদের বাবা-মা এবং অন্য এক স্বজনও নিহত হন।
আরেক ঘটনায়, গত ৮ জানুয়ারি ড্রোন হামলায় নিহত হয় ৮ ও ১০ বছর বয়সী দুই শিশু—রেদা বাশারাত ও হামজা বাশারাত। হামলার কারণে ওইদিন তাদের স্কুলে যাওয়া হয়নি। হামজা ছিল খুবই হাসিখুশি ও মেধাবী, পড়াশোনায় তার খুব আগ্রহ ছিল। ওইদিন স্কুলে ইংরেজি পরীক্ষা দিতে না পারায় সে খুব মন খারাপ করেছিল।
বি’Tসেলেম-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধের পর গত ১৭ মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ১৮০ জন শিশু নিহত হয়েছে। পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের প্রায় ৬০ বছরের দখলদারিত্বের ইতিহাসে এটি শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সময়।
সংস্থাটির মতে, শিশু মৃত্যুর এই ঊর্ধ্বগতির একটি কারণ হলো ইসরায়েলি বাহিনীর ‘গুলি চালানোর নিয়ম’-এ শিথিলতা আনা হয়েছে। এখন সৈন্যদের সন্দেহ হলে কাউকে ‘ভূমি নষ্ট করার’ অভিযোগে গুলি করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, সেনারা ‘আসন্ন বছরগুলোতে’ সেখানে অবস্থান করবে। অর্থাৎ, বাসিন্দাদের আপাতত সেখানে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। যদিও ইসরায়েল দাবি করে, তাদের অভিযানগুলো কেবল ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্থা ‘বি’Tসেলেম’-এর প্রতিবেদন এবং *দ্য গার্ডিয়ান*-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পশ্চিম তীরে শিশুদের ওপর সহিংসতার এই ভয়াবহ চিত্র গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: *দ্য গার্ডিয়ান*