যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের সদস্য লরেন বোবার্ট-এর বিরুদ্ধে এবার বর্ণবাদ ও শারীরিক অক্ষমতাকে উস্কে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ডেমোক্রেটিক দলের সংসদ সদস্য আল গ্রিন-কে সম্প্রতি কড়া ভাষায় আক্রমণ করার পরেই এই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ট্রাম্পের ভাষণের সময় গ্রিন “তাঁর ‘পিম্প কেন’ (pimp cane) নাড়াচাড়া করছিলেন” – এমন মন্তব্য করে বোবার্ট বর্ণবাদী পরিচয় দিয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত, যখন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কংগ্রেসে ভাষণ দিচ্ছিলেন। সেই সময় টেক্সাসের ডেমোক্রেট প্রতিনিধি আল গ্রিন, ট্রাম্পের সামাজিক সুরক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দের বিরোধিতা করে চিৎকার করেন এবং এর জেরে তাঁকে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। এই ঘটনার পরেই বোবার্ট এক সাক্ষাৎকারে গ্রিনের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, গ্রিনকে “বারবার শান্ত হওয়ার, বসে পড়ার এবং শালীনতা বজায় রাখার” সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি তা করেননি। বোবার্টের মতে, ট্রাম্পের সামনে গ্রিনের “পিম্প কেন” নাড়ানো “একেবারেই ঘৃণ্য” ছিল।
বোবার্টের এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায় বিভিন্ন মহলে। কেউ কেউ এটিকে “প্রকাশ্য বর্ণবাদ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অনেকের মতে, গ্রিন যেহেতু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে একটি লাঠি ব্যবহার করেন, তাই “পিম্প কেন” শব্দ ব্যবহার করে বোবার্ট শারীরিক অক্ষমতা বিষয়ক বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন।
আল গ্রিন অবশ্য তাঁর এই আচরণের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি জানান, তিনি “মেডিকেয়ার, মেডিকেইড এবং সামাজিক নিরাপত্তা”র মতো বিষয়গুলির পক্ষে কথা বলতে গিয়েই প্রতিবাদ করেছিলেন। গ্রিন আরও বলেন, “ডেমোক্র্যাটরা এমন একটি সমাজের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে যেখানে প্রত্যেক আমেরিকান নিরাপদ, সুস্থ এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে বাঁচতে পারে।
এই ঘটনার পরে, রিপাবলিকানরা গ্রিনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করেন, যা ১০ জন ডেমোক্রেট সদস্যের সমর্থন পায়।
এখানেই শেষ নয়, বোবার্টের এই সমালোচনার সময়ে তাঁর নিজের অতীতের কিছু বিতর্কিত ঘটনার প্রসঙ্গও উঠে আসে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালের স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণে জো বাইডেনের উপস্থিতিতে বোবার্ট এবং মার্জোরি টেলর গ্রিন “দেয়াল গড়ো” (Build the wall) বলে শ্লোগান দিয়েছিলেন। এছাড়া, ২০২৩ সালে ডেনভারে একটি অনুষ্ঠানে অপ্রত্যাশিত আচরণের জন্য বোবার্টকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
বোবার্টের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা একদিকে যেমন তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তেমনই তাঁর দ্বিচারিতাও স্পষ্ট হয়। যেখানে তিনি অন্যের আচরণ নিয়ে সমালোচনা করছেন, সেখানে তাঁর নিজের অতীতের বিতর্কিত কার্যকলাপগুলোও সামনে আসছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান