মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীর ভোটাধিকার: ১৯তম সংশোধনীর প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য

নারী অধিকার এবং ভোটাধিকার আদায়ের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯তম সংশোধনী একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল। এই সংশোধনীর মাধ্যমে নারীদের ভোটাধিকারের পথ সুগম হয়, যা ছিল এক দীর্ঘ এবং কঠিন সংগ্রামের ফল। ১৯২০ সালের আগস্ট মাসে এই আইনটি কার্যকর হয়, কিন্তু এর পেছনে ছিল এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলন।

**সংগ্রামের সূচনা ও বাধা**

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, বিশেষ করে ১৮৪০-এর দশকে, যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন জোরদার হয়। সে সময় নারীদের ভোটাধিকার ছিল না, এবং তারা সমাজের অনেক মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তাদের জনসমক্ষে কথা বলা বা উপস্থিত হওয়া নিরুৎসাহিত করা হতো। এমনকি, তারা নিজেদের সম্পত্তি রাখতে পারতেন না, এবং তাদের জীবনযাত্রা মূলত স্বামী, ভাই বা বাবার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো। ১৮৪৮ সালে, সেনেকা ফলস-এ নারী অধিকার বিষয়ক প্রথম কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ভোটাধিকারের পাশাপাশি নারীদের আরও অনেক অধিকারের দাবি জানানো হয়।

**সংগ্রামের দীর্ঘ পথ**

নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের সংগ্রাম করেছেন। কেউ কেউ ভোট দেওয়ার চেষ্টা করে কারাবরণ করেছেন, আবার কেউ শ্বেত ভবনের সামনে প্রতিবাদ করেছেন। অনেকে অহিংস ও সহিংস – উভয় ধরনের নাগরিক অবাধ্যতা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের এই লড়াইয়ে প্রথম সাফল্য আসে পশ্চিমা রাজ্যগুলোতে, যেখানে কিছু পুরুষ আইনপ্রণেতা বিশ্বাস করতেন যে নারীদের ভোট দেওয়ার অধিকার দিলে ঐ অঞ্চলে আরও বেশি নারী বসতি স্থাপন করতে উৎসাহিত হবে। কিন্তু এই বিজয় এত সহজে আসেনি, বরং দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা আন্দোলনের ফল ছিল এটি।

উনিশ শতকের শেষ দিকে, নারীরা জাতীয় পর্যায়ে ভোটাধিকারের জন্য তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। তাদের ব্যঙ্গ করা হয়েছে, কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে, এমনকি মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু তারা সমাজের প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দিয়ে তাদের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যান। ২০ শতকের শুরুতে, তারা একটি সাংবিধানিক সংশোধনীর ওপর গুরুত্ব দেন। বিশাল মিছিল ও হোয়াইট হাউসের সামনে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান ধর্মঘটের মতো কৌশল অবলম্বন করে তারা ধীরে ধীরে জনসাধারণের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হন। ১৮৭৮ সালে প্রথম ভোটাধিকার সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়, যা ১৯তম সংশোধনী হিসেবে ১৯২০ সালে কার্যকর হয়।

**সংशोधনীর প্রভাব ও সীমাবদ্ধতা**

১৯তম সংশোধনী নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তবে এর সুফল সবাই তাৎক্ষণিকভাবে পায়নি। বিংশ শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় ধরে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ভোটদানে বাধা দেওয়া হতো। আদিবাসী আমেরিকান এবং এশীয়-মার্কিন নারীদেরও নাগরিকত্বের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক বছর ধরে ভোট দিতে সমস্যা হয়েছে। এছাড়া, এই সংশোধনী নারীদের জন্য সব ধরনের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। নারীদের সাংবিধানিক সুরক্ষা প্রদানের জন্য একটি প্রস্তাবিত সংশোধনী এখনও আইনে পরিণত হয়নি। সরকারি পদে নারীর সংখ্যা এখনো পুরুষের তুলনায় অনেক কম, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে এখনো কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি।

তবে, এটি অনস্বীকার্য যে ১৯তম সংশোধনী নারীদের অধিকার আদায়ের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। বর্তমানে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি সংখ্যায় ভোট দিয়ে থাকেন।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক