শিরোনাম: গ্রিনল্যান্ড: ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের খনিজ সম্পদ আর মার্কিন সামরিক ঘাঁটির ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব
বর্তমান বিশ্বে, দেশগুলোর মধ্যে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের এক নীরব প্রতিযোগিতা চলছে। এই প্রতিযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো কৌশলগত অবস্থান এবং প্রাকৃতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ। সম্প্রতি গ্রিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলের গুরুত্ব নতুন করে সামনে এসেছে। গ্রিনল্যান্ড, বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ, ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। কিন্তু এর ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি।
গ্রিনল্যান্ডের নির্বাচন: একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
সম্প্রতি, গ্রিনল্যান্ডে একটি আগাম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনের কারণ হিসেবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মুটে এগেদে অভ্যন্তরীণ ঐক্যের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, কঠিন সময়ে দেশের ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। তবে, নির্বাচনের মূল কারণ সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করার আগ্রহ।
ট্রাম্পের আগ্রহ ও গ্রিনল্যান্ডের কৌশলগত গুরুত্ব
২০১৯ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম গ্রিনল্যান্ডকে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন, যা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। তার মতে, গ্রিনল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান এবং খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য এর গুরুত্ব বাড়িয়েছে। আর্কটিক সার্কেলের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায়, গ্রিনল্যান্ড উত্তর আমেরিকার অংশ হিসেবে বিবেচিত। বিশাল বরফের চাদরে ঢাকা এই দ্বীপের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকাজুড়ে রয়েছে বিশাল হিমবাহ। এখানকার প্রায় ৫৬,০০০ জনসংখ্যার অধিকাংশই উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করে, যার এক তৃতীয়াংশ নুউক শহরে বাস করে।
ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে গ্রিনল্যান্ড
ঐতিহাসিকভাবে, গ্রিনল্যান্ডে ইনুইট জাতির মানুষের বসবাস ছিল। ১০ম শতকে এখানে নরওয়েজিয়ান অভিযাত্রীরা এসেছিলেন। ১৮১৪ সালে ডেনমার্ক আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রিনল্যান্ডকে তাদের উপনিবেশ ঘোষণা করে। দীর্ঘ দুই শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ডেনমার্কের অধীনে থাকার পর, ১৯৭৯ সালে গ্রিনল্যান্ড স্ব-শাসন লাভ করে। বর্তমানে এটি ডেনমার্কের দুটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম, অন্যটি হলো ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জ।
সামরিক উপস্থিতি ও কৌশলগত বিবেচনা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, জার্মানির সাবমেরিন প্রতিরোধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ডেনমার্ক গ্রিনল্যান্ডে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দেয়। এরপর ঠান্ডা যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে এই ঘাঁটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমানে, এখানে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পিটফিক স্পেস বেস’ (আগে থুলে এয়ার বেস নামে পরিচিত ছিল) অবস্থিত। এটি ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কতা, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা, এবং মহাকাশ পর্যবেক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই ঘাঁটিতে প্রায় ৬৫০ জন সামরিক সদস্য কর্মরত আছেন।
খনিজ সম্পদের ভান্ডার
গ্রিনল্যান্ডে জিংক, সীসা, সোনা, লৌহ আকরিক, বিরল মৃত্তিকা উপাদান (rare earth elements), তামা এবং তেলের মতো মূল্যবান খনিজ সম্পদের বিশাল ভান্ডার রয়েছে। বিশেষ করে, আধুনিক প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য ‘বিরল মৃত্তিকা উপাদান’-এর বৃহত্তম ভাণ্ডারগুলোর একটি এখানে বিদ্যমান। জানা যায়, সোনার খনি রয়েছে নানোরতালিক এবং দক্ষিণ গ্রিনল্যান্ডে। এছাড়া, মানিটসোক অঞ্চলে হীরারও সন্ধান পাওয়া গেছে।
গ্রিনল্যান্ডের আকার এবং গুরুত্ব
ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর বিশাল আকারও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গ্রিনল্যান্ড প্রায় ২.১৭ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, যা টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের চেয়ে তিনগুণ বড় এবং সৌদি আরব, মেক্সিকো বা কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের কাছাকাছি।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা