জার্মান পর্যটকদের আটকের ঘটনা: যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি নিয়ে উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি কয়েকজন ইউরোপীয় পর্যটকের আটকের ঘটনা ঘটেছে, যা দেশটির সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অভিবাসন নীতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে জার্মানির কয়েকজন নাগরিক রয়েছেন। তাঁদের আটকের কারণ এবং সেখানে তাঁদের সঙ্গে হওয়া আচরণ নিয়ে বিস্তারিত জানা গেছে।
বার্লিনের ২৯ বছর বয়সী ট্যাটু শিল্পী জেসিকা ব্রোশেকে প্রায় ছয় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ডিটেনশন সেন্টারে আটক করে রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে আট দিন তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নির্জন কারাবাসে। অবশেষে মঙ্গলবার তাঁকে জার্মানে ফেরত পাঠানোর কথা রয়েছে। ব্রোশে-র বন্ধু নিকিতা লোফভিং জানিয়েছেন, আটকের সময় ব্রোশে-র সঙ্গে ভয়াবহ আচরণ করা হয়েছে। সেখানকার পরিবেশ ছিল ভীতিকর, যেখানে অন্য বন্দিদের আর্তচিৎকার শোনা যেত। ব্রোশে এতটাই মানসিক চাপে ছিলেন যে, তিনি দেয়াল ভাঙতে শুরু করেছিলেন। এমনকি, তাঁকে অ্যান্টি-সাইকোটিক ওষুধ দেওয়ারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
আরেক জার্মান পর্যটক, ২৫ বছর বয়সী লুকাস সিয়েলাফকে মেক্সিকো সীমান্ত থেকে আটক করা হয়েছিল। প্রায় দুই সপ্তাহ ডিটেনশন সেন্টারে কাটানোর পর গত ৬ মার্চ তিনি দেশে ফিরে যান। জানা গেছে, তিনি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন, এমন সন্দেহে তাঁকে আটক করা হয়। সিয়েলাফ তাঁর বান্ধবী লেনন টাইলারের সঙ্গে মেক্সিকোতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে সীমান্ত ক্রসিং-এর সময়, তিনি কোথায় থাকেন—এমন একটি প্রশ্নের ভুল উত্তর দিয়েছিলেন, যা সম্ভবত তাঁর আটকের কারণ হয়। টাইলার বর্তমানে তাঁর বান্ধবীকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে নিরুৎসাহিত করছেন।
জার্মান কনস্যুলেট এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উভয়ই এই বিষয়গুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আটকের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার তাঁদের দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। তাঁদের মতে, এটি যেন একটি “ভয়ঙ্কর চলচ্চিত্রের” মতো।
শুধু জার্মান পর্যটকদের সঙ্গেই নয়, একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ব্রিটিশ পর্যটকদের ক্ষেত্রেও। ২৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ গ্রাফিক শিল্পী রেবেকা বার্ক-কে কানাডা সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় আটক করা হয়। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ১১ দিনের বেশি সময় ধরে তিনি একটি ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। তাঁর বাবা জানিয়েছেন, সেখানকার পরিবেশ খুবই খারাপ।
পর্যটকদের আটকের এসব ঘটনা মূলত যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অভিবাসন নীতির কঠোরতা বৃদ্ধির ফল হিসেবে দেখা হচ্ছে। সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার পাশাপাশি, আটক হওয়া ব্যক্তিদের মামলার নিষ্পত্তিতেও দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত জার্মানির নাগরিকদের আটকের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করা হয়নি। তবে, এসব ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান