যুক্তরাষ্ট্রের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের জেরে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মার্কিন এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে এবং পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে এবং বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে শুরু হওয়া এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে। ইস্পাতের ওপর ২৫ শতাংশ এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। এর ফলে কানাডা, মেক্সিকো, চীনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ব্রাজিল ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা ঘোষণা করেছে যে, আগামী মাস থেকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে, যার পরিমাণ প্রায় ২৬ বিলিয়ন ইউরোর (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা)। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন এক বিবৃতিতে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কের অর্থনৈতিক প্রভাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, “ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই সময়ে, আমাদের অর্থনীতিকে শুল্কের বোঝা চাপানো কোনোভাবেই আমাদের সাধারণ স্বার্থের অনুকূল নয়।”
কানাডা, যারা যুক্তরাষ্ট্রকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের বৃহত্তম সরবরাহকারী, তারাও পাল্টা ব্যবস্থা বিবেচনা করছে। যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যসচিব জোনাথন রেইনল্ডস জানিয়েছেন, জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় তাদের সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এই পদক্ষেপকে “অযৌক্তিক” এবং “দু’দেশের বন্ধুত্বের পরিপন্থী” হিসেবে বর্ণনা করেছেন, তবে পাল্টা শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা তিনি নাকচ করেছেন।
অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার দুটি শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত প্রস্তুতকারক কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কারখানা স্থাপনের কথা বিবেচনা করছে। তাদের এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের সেই দাবির প্রতি সমর্থন যোগাচ্ছে, যেখানে তিনি বলেছিলেন, শুল্কের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে পারে এবং রপ্তানি বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্প এই পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা