মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় সংকোচনের পরিকল্পনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক চলছে। দেশটির প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান দলের সদস্যরা আগামী এক দশকে ৮৮০ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯৭ লাখ কোটি টাকা) বাজেট কাটার প্রস্তাব করেছেন। তবে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কিভাবে সংগ্রহ করা হবে, তা নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে তীব্র আপত্তি উঠেছে। তাঁদের অভিযোগ, স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কমানোর মাধ্যমে এই লক্ষ্য পূরণ করতে চাইছে রিপাবলিকানরা, যা দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে সহায়তার জন্য দুটি প্রধান কর্মসূচি রয়েছে: মেডিকেয়ার এবং মেডিকেইড। মেডিকেয়ার মূলত বয়স্ক নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে, যেখানে মেডিকেইড দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের জন্য স্বাস্থ্য বীমা সরবরাহ করে। রিপাবলিকানরা মেডিকেয়ারে কোনো কাটছাঁট করতে রাজি নন, কারণ এর রাজনৈতিক প্রভাব বেশ গুরুতর হতে পারে। তাই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য এখন মেডিকেইড।
ডেমোক্র্যাট দলের নেতারা বলছেন, মেডিকেইডের ওপর এই ধরনের আঘাত আমেরিকার ইতিহাসে নজিরবিহীন। তাঁদের অভিযোগ, রিপাবলিকানরা বিষয়টি নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন এবং এর ফলস্বরূপ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবেন বহু মানুষ। যদিও রিপাবলিকানরা সরাসরি মেডিকেইড কাটছাঁটের কথা অস্বীকার করেছেন, তাঁদের বাজেট প্রস্তাবের ফলে এই কর্মসূচির ওপর যে চাপ সৃষ্টি হবে, তা প্রায় নিশ্চিত।
রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাঁরা মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে নেওয়া কর হ্রাস নীতির মেয়াদ বাড়াতে চান। এই কারণে তাঁদের বিশাল অঙ্কের অর্থ সাশ্রয়ের প্রয়োজন। এছাড়াও, সরকারি ব্যয়ের অন্য ক্ষেত্রগুলোতেও কাটছাঁট করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় কমানো রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয়।
এই পরিস্থিতিতে অনেকে মনে করছেন, সরকার যদি মেডিকেইড, মেডিকেয়ার বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ খাতে হাত না দেয়, তাহলে ৮৮০ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা কঠিন হবে। এমনকি স্বাস্থ্যখাতের অন্য কোনো ছোটখাটো কর্মসূচি বন্ধ করে দিলেও এই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্যনীতি বিষয়ক গবেষণা সংস্থা কেএফএফের (KFF) এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, মেডিকেইডে বড় ধরনের কাটছাঁট করা ছাড়া এই পরিমাণ অর্থ জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব।
তবে, রিপাবলিকানদের এই পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত রূপ নেয়নি। সিনেটে বিষয়টি নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে, ফলে আলোচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো এখনো অনেক দূরের পথ। এমনকি চূড়ান্ত প্রস্তাব পাস হলেও, তা কার্যকর করতে হলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি নির্মূলের মাধ্যমে কিছু অর্থ সাশ্রয়ের কথা বলা হলেও, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এতে খুব বেশি সুবিধা হবে না। কারণ, স্বাস্থ্যখাতে যে পরিমাণ অনিয়ম হয়, তা কাঙ্ক্ষিত সাশ্রয়ের তুলনায় খুবই সামান্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বাজেট বিতর্ক বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ উন্নত দেশগুলোর নীতি ও সিদ্ধান্তের প্রভাব বিশ্বজুড়ে পড়ে। বিশেষ করে, স্বাস্থ্যখাতে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি একটি সার্বজনীন সমস্যা। আমাদের দেশেও সীমিত সম্পদের মধ্যে কীভাবে সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা