মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (MS) রোগীদের জন্য সুখবর, ইংল্যান্ডে এলো বাড়িতে বসে খাওয়ার ওষুধ
বাংলাদেশে মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (এমএস) রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু উন্নত চিকিৎসার সুযোগ এখনো সীমিত। তবে, ইংল্যান্ডে এমএস রোগীদের জন্য একটি নতুন, যুগান্তকারী চিকিৎসা পদ্ধতি চালু হয়েছে যা রোগীদের জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন আনবে। এই নতুন ঔষধটি হলো ক্লাডরিবিন (cladribine), যা রোগীদের হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপ থেকে মুক্তি দেবে এবং বাড়িতে বসেই খাওয়ার সুযোগ তৈরি করবে।
এমএস (MS) একটি স্নায়ুরোগ, যা মস্তিষ্ক ও মেরুরজ্জুকে আক্রান্ত করে। এর ফলে প্যারালাইসিস, দৃষ্টি সমস্যা, স্মৃতি দুর্বলতা এবং চরম ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। সাধারণত, এই রোগের চিকিৎসায় রোগীদের নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়, ইনজেকশন নিতে হয় এবং বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যা রোগী এবং তাদের পরিবারের জন্য অনেক কষ্টের কারণ হয়। কিন্তু ক্লাডরিবিন (cladribine) আসার ফলে সেই কষ্ট অনেকটা কমবে। এটি একটি ট্যাবলেট, যা রোগীরা বাড়িতে বসেই খেতে পারবেন।
চিকিৎসা পদ্ধতিটি খুবই সহজ। এই ওষুধটি প্রথম দুই বছরে মোট ২০ দিন খেতে হবে। প্রথম বছরে ১০ দিন এবং দ্বিতীয় বছরে ১০ দিন ওষুধ সেবন করতে হবে। এরপরের দুই বছর কোনো ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হবে না। এছাড়াও, যে সকল মহিলা রোগী মা হতে চান, তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এই ওষুধ সেবনের তৃতীয় ও চতুর্থ বছরে তারা নিরাপদে সন্তান ধারণ করতে পারবেন।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) এই ওষুধটি রোগীদের জন্য সরবরাহ করতে শুরু করেছে। এটি ইউরোপের মধ্যে প্রথম, যেখানে এত ব্যাপকভাবে এই ওষুধ রোগীদের জন্য উপলব্ধ করা হচ্ছে। এর আগে, ক্লাডরিবিন শুধুমাত্র যাদের এমএস-এর গুরুতর সমস্যা ছিল, তাদের জন্য অনুমোদন করা হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি আরও অনেক রোগীর জন্য সহজলভ্য হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ওষুধ রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির নিউরোলজির অধ্যাপক এবং বার্টস হেলথ এনএইচএস ট্রাস্টের কনসালটেন্ট নিউরোলজিস্ট, প্রফেসর ক্লস শ্মিরার (Klaus Schmierer) বলেন, “এই নতুন ঔষধের মাধ্যমে রোগীরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক থাকতে পারবে।
এনএইচএস ইংল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ কমিশনের মেডিকেল ডিরেক্টর প্রফেসর জেমস পামার (James Palmer) বলেন, “এনএইচএস গর্বিত যে তারা ইউরোপে প্রথম এই নতুন ‘ঘরে বসে খাওয়ার’ ওষুধটি চালু করেছে।
এমএস সোসাইটির নীতি বিভাগের প্রধান লরা থমাস (Laura Thomas) এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “রোগীদের জন্য চিকিৎসার বিকল্প বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
অন্যদিকে, এইচআইভি প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও একটি নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। একটি প্রাথমিক গবেষণায় জানা গেছে, বছরে একবার ইনজেকশন (lenacapavir) নিলে এইচআইভি থেকে সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে। বর্তমানে, যারা এইচআইভি ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের প্রতিদিন ওষুধ (PrEP) খেতে হয়। কিন্তু এই নতুন ইনজেকশন নিলে সেই সমস্যার সমাধান হবে।
আশা করা যায়, এই চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো বাংলাদেশেও দ্রুত আসবে এবং এমএস ও এইচআইভি রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান