যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের (Columbia University) স্নাতকোত্তর ছাত্র মাহমুদ খলিলকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে দেশটির অভিবাসন ও শুল্ক বিভাগ (ICE)। কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন খলিলের স্ত্রী। বর্তমানে তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
**গ্রেপ্তারের কারণ ও প্রেক্ষাপট**
জানা গেছে, মাহমুদ খলিলের গ্রিন কার্ড বাতিলের চেষ্টা করছে ICE। কর্তৃপক্ষের দাবি, তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে, খলিলের স্ত্রীর অভিযোগ, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের বিষয়ে তার স্বামীর সক্রিয়তা এবং গাজা উপত্যকার প্রতি সংহতি জানানোয় এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। গত বছর, হামাসের ইসরায়েলে হামলার পর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে আয়োজিত বিক্ষোভে মাহমুদ খলিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
খলিলের স্ত্রী সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানান, গত শনিবার রাতে তারা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে ফিরছিলেন, তখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা তাদের পথরোধ করে। এরপর খলিলকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে স্থানীয় একটি থানায় এবং পরে নিউ জার্সি হয়ে লুইজিয়ানার একটি ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।
**স্ত্রীর আকুতি ও উদ্বেগের কথা**
খলিলের স্ত্রী, যিনি একজন মার্কিন নাগরিক, তার স্বামীর মুক্তি চেয়ে বিশ্ববাসীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি বিশ্বকে অনুরোধ করছি, আপনারা এই অন্যায় ও ভীতিকর গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন।” তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারের কয়েক দিন আগে থেকেই তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগের প্রচার শুরু হয়েছিল।
গ্রেপ্তারের দিন রাতের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “গত ৮ মার্চ, ইফতারের (রমজানের সময় সন্ধ্যায় মুসলমানরা যে খাবার গ্রহণ করেন) পর বাড়ি ফেরার সময়, একজন ICE অফিসার আমাদের ভবনে প্রবেশ করে মাহমুদকে শনাক্ত করে। এরপর তাকে জানানো হয় যে, তাকে তাদের সঙ্গে যেতে হবে। যখন আমি আমার স্বামীকে একা ফেলে যেতে রাজি হইনি, তখন ওই অফিসার আমাকেও গ্রেপ্তারের হুমকি দেন।” তিনি আরও জানান, তাদের কোনো ওয়ারেন্ট (আদালতের অনুমতিপত্র) দেখানো হয়নি এবং তাদের আইনজীবী ফোন করলে, তা কেটে দেওয়া হয়।
খলিলের স্ত্রী জানান, তার স্বামী সব সময় শান্ত ছিলেন এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত ভীতিকর ও উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, “মুহূর্তের মধ্যে তারা মাহমুদকে হাতকড়া পরিয়ে একটি সাদা গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।”
**মামলার আইনি প্রক্রিয়া ও বিচারকের পদক্ষেপ**
এ ঘটনার পর, খলিলের গ্রিন কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই গ্রেপ্তারকে বাক-স্বাধীনতার ওপর চরম আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছে। জানা গেছে, বুধবার ম্যানহাটনে খলিলের মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এরই মধ্যে, ফেডারেল বিচারক জেসি ফারম্যান খলিলের দেশত্যাগে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। তার আইনজীবীরা দ্রুত তার মুক্তির জন্য চেষ্টা করছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান