1. [email protected] : adminb :
  2. [email protected] : Babu : Nurul Huda Babu
March 13, 2025 1:29 AM
সর্বশেষ সংবাদ:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মাদারীপুর পৌর শাখার ২নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত শেষ মুহূর্তে বাজিমাত, বাস্কেটবলে অবিশ্বাস্য জয় পেল ইন্ডিয়ানা! স্কি জাম্পিংয়ে প্রতারণা! অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নসহ ২ তারকার সাসপেনশন মাঠে ফিরেই বাজিমাত! দামার হ্যামলিনের চুক্তিতে আবেগঘন মুহূর্ত! কোবি ব্রায়ান্টের মৃত্যুর পর বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের চোখে তাঁর অমূল্য শিক্ষা! আবারও দুঃসংবাদ! টাইগার উডস কি গলফ থেকে বিদায় নিচ্ছেন? আতলেটিকোকে কাঁদিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে কি রিয়ালের সাথে আর্সেনাল? যুদ্ধবিরতির আলোচনা: ট্রাম্পের কোন চালে কাবু হবেন পুতিন? ইউটিউব থেকে কারাগারে: রুবি ফ্রাঙ্কের ভয়ঙ্কর কাহিনী! বদলে যাবে খেলা? ম্যান ইউ নিয়ে রাটклиফের মন্তব্যে একমত অ্যামোরিম!

পিকেকে বিলুপ্তির ঘোষণা: তুরস্ক-সিরিয়ার ক্ষমতা পরিবর্তনে বড় ধাক্কা!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট হয়েছে : Wednesday, March 12, 2025,

তুরস্কে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) ভেঙে দেওয়ার সম্ভাবনা: আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ

সম্প্রতি তুরস্কের কারাগারে বন্দী পিকেকে-র প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ ওকালানের দল ভেঙে দেওয়ার ঘোষণার প্রেক্ষাপটে তুরস্ক এবং প্রতিবেশী সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন মোড় নিতে শুরু করেছে। ওকালানের এই ঘোষণার ফলস্বরূপ সিরিয়ার কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)-এর সঙ্গে সিরীয় সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে, যা তুরস্কের নিরাপত্তা নীতি থেকে শুরু করে কুর্দি দলগুলোর ভবিষ্যৎ অবস্থান পর্যন্ত সবকিছু নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার সুযোগ তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে আঞ্চলিক ক্ষমতার বিন্যাসেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে তুরস্কের একটি কারাগার থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ওকালান পিকেকে-কে তার কংগ্রেস আহ্বান করে দল ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আপনাদের কংগ্রেস ডাকুন এবং সিদ্ধান্ত নিন। সকল গোষ্ঠী যেন অস্ত্র ত্যাগ করে এবং পিকেকে-কে বিলুপ্ত করা হোক।”

ওকালানের এই আহ্বানের জবাবে, ইরাকের কান্দিল পর্বতমালায় অবস্থিত পিকেকে’র নেতৃত্ব অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করেছে। একইসঙ্গে তারা নিরস্ত্রীকরণ এবং দল বিলুপ্তির মতো বিষয়গুলো কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের জন্য স্থগিত রেখেছে, যা সম্ভবত আগামী এক বা দুই মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। তবে তুরস্কের পক্ষ থেকে পিকেকে-র সঙ্গে যুক্ত সকল গোষ্ঠীকে, বিশেষ করে সিরিয়ার শাখাগুলোকে নিঃশর্তভাবে ভেঙে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে তুরস্কের সঙ্গে পিকেকে-র সংঘাতের ফলস্বরূপ ৪০,০০০ এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ওকালান শুধু এই আন্দোলনের আদর্শিক নেতাই ছিলেন না, বরং ১৯৯৯ সালে তাঁর বন্দী হওয়ার আগ পর্যন্ত সশস্ত্র বিদ্রোহের নেতৃত্বও দিয়েছেন। তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন পিকেকে-কে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।

অতীতে ওকালান একাধিকবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও, এবারই প্রথম তিনি পিকেকে-কে বিলুপ্ত করার কথা বলেছেন। এর কারণ হিসেবে কুর্দি রাজনৈতিক আন্দোলনের পরিবর্তন, তুরস্কের রাষ্ট্রীয় কৌশল এবং সিরিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতাকে বিশেষভাবে দায়ী করা হচ্ছে। সশস্ত্র সংগ্রামের কৌশলগত গুরুত্ব হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে কুর্দি রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থান ঘটেছে, যা তুরস্কের রাজনীতিতে পিকেকে-র প্রভাবকে দুর্বল করে দিয়েছে।

একসময় ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একে পার্টি)-এর জন্য জাতীয়তাবাদী ভোট সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, বর্তমানে কুর্দিপন্থী রাজনীতির প্রসারের কারণে পিকেকে’র প্রভাব হ্রাস পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৫ সালের জুনে পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি) ১০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে সংসদে নিজেদের আসন নিশ্চিত করে, যা কুর্দি দলগুলোর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল। বর্তমানে, এই দল ‘পিপলস ইক্যুয়ালিটি অ্যান্ড ডেমোক্রেটিক পার্টি’ (ডেম) নামে পরিচিত এবং তুরস্কের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই প্রেক্ষাপটে, ওকালানের দল বিলুপ্তির আহ্বান কুর্দি রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের পরিসরকে গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে প্রসারিত করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমে কুর্দিদের রাজনৈতিক সমাবেশ সশস্ত্র সংগ্রামের চেয়ে বর্তমানে অনেক বেশি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে।

তবে, কুর্দিদের এই রাজনৈতিক উত্থান সহজ ছিল না। সরকার বিভিন্ন সময়ে তাদের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, এইচডিপি’র সাবেক নেতা এবং রাষ্ট্রপতি প্রার্থী সালাহউদ্দিন দেমিরতাস এখনো কারাবন্দী রয়েছেন। এছাড়া, পিকেকে’র সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কুর্দি রাজনীতিবিদ ও কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এমনকি, ২০২৪ সালের স্থানীয় নির্বাচনের পর সরকার কুর্দি অধ্যুষিত কিছু পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ করে ডেম পার্টির নির্বাচিত মেয়রদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে বাধা দিয়েছে।

তবে, কুর্দিপন্থী রাজনীতির স্বাভাবিকীকরণের ফলে এসব বিধিনিষেধ শিথিল হতে পারে। বৃহত্তর আন্দোলনের ওপর থেকে “সন্ত্রাসী” তকমা সরিয়ে এবং কুর্দি প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে, একে পার্টির জন্য কুর্দিদের সমর্থন আদায় এবং তুর্কি জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন ধরে রাখা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই পরিস্থিতিতে, সরকারের মধ্যে কট্টরপন্থী এবং জাতীয়তাবাদী মহলের বিরোধিতার কারণে কুর্দিদের প্রতি কোনো ধরনের নমনীয়তা দেখানো হলে তা রাজনৈতিকভাবে কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে, “কুর্দি ইস্যু” তুরস্কের পররাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে পশ্চিমা মিত্র ও ইইউ-র সঙ্গে দীর্ঘকাল ধরে একটি বাধা হিসেবে কাজ করেছে। মানবাধিকার, কুর্দি অধিকার খর্ব করা, কুর্দি রাজনীতিবিদদের কারারুদ্ধ করা এবং সিরিয়ায় আইএসআইএল (আইএসআইএস)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কুর্দি গোষ্ঠীগুলোকে পশ্চিমাদের সমর্থন—এসব কারণে তুরস্কের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা গেছে।

এই পরিবর্তনের সফল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আঙ্কারা কুর্দি রাজনৈতিক স্বাভাবিকীকরণের রূপকার হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে পারে, যা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। একইসঙ্গে, তুরস্ক বা পিকেকে-র কেউই সামরিকভাবে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারবে না—এই বাস্তবতা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। তুরস্কে সক্রিয় সংঘাত কমে যাওয়ায় জনমনেও পরিবর্তন এসেছে।

তুরস্কের সামরিক অভিযান—যেমন, ২০১৬-২০১৭ সালের ‘ইউফ্রেটিস শিল্ড’, ২০১৮ সালের ‘অলিভ ব্রাঞ্চ’ এবং ২০১৯ সালের ‘পিস স্প্রিং’—এর ফলে প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র তুরস্কের সীমান্ত অঞ্চল থেকে উত্তর সিরিয়ায় স্থানান্তরিত হয়েছে। বর্তমানে, তুরস্ক সমর্থিত সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এসএনএ)-এর সঙ্গে সিরীয় কুর্দি বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। এই কৌশল একদিকে যেমন তুরস্ক নিয়ন্ত্রিত এলাকা তৈরি করেছে, তেমনিভাবে আফরিন, রাস আল-আইন এবং তাল আবিয়াদ-এর মতো সিরীয় অঞ্চলে ক্ষমতা দখলের লড়াই তীব্র করেছে।

পিকেকে-র বিলুপ্তি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি), যারা একে পার্টির ২৩ বছরের শাসনের অবসান চায়, তারা এই উদ্যোগের প্রতি দ্বিধাগ্রস্ত। সিএইচপি আনুষ্ঠানিকভাবে “কুর্দি ইস্যু”-র শান্তিপূর্ণ সমাধানের সমর্থন জানালেও, এরদোয়ানের সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত কোনো প্রক্রিয়ার ওপর তাদের সন্দেহ রয়েছে।

বর্তমানে, তারা একটি ‘অপেক্ষা ও দেখার’ নীতি গ্রহণ করেছে, কারণ পিকেকে-র বিলুপ্তির উদ্দেশ্য জানা গেলেও, এর প্রক্রিয়া এখনো স্পষ্ট নয়।

ওকালানের এই আহ্বান বৃহত্তর পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে অঞ্চলের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো টিকে থাকার জন্য ক্রমশ নিজেদের মানিয়ে নিতে চাপ অনুভব করছে। উত্তর সিরিয়ায় ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন পার্টি (পিওয়াইডি) এবং তাদের সশস্ত্র শাখা—পিপলস ডিফেন্স ইউনিটস (ওয়াইপিজি)-এর প্রধান কৌশল হলো তাদের আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখা।

পিওয়াইডি, ২০০৩ সালে পিকেকে থেকে গঠিত হয়ে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে এবং তুরস্ক ও তুরস্ক সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সামরিক অভিযানের শিকার হয়েছে। ওকালানের সম্ভবত আশা করছেন, পিকেকে বিলুপ্ত হলে তুরস্ক ও পিওয়াইডি-র মধ্যে সরাসরি সংঘাত কমবে, যা সম্ভবত পিওয়াইডি-কে নতুন সিরীয় রাষ্ট্রে স্ব-শাসন এবং অধিকার রক্ষার সুযোগ করে দেবে।

এই লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো, সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)-এর সঙ্গে দামেস্কে সিরীয় সরকারের সমঝোতা চুক্তি। এই চুক্তির ফলে এসডিএফ বাহিনী সিরীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিশে যাবে এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।

তুরস্ক এসডিএফ-এর প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করবে কিনা, তা নির্ভর করবে চুক্তির বিস্তারিত বিষয় এবং তার বাস্তবায়নের ওপর। এখন পর্যন্ত, এরদোয়ান এই চুক্তির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং এর সফল বাস্তবায়নে সিরিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

পরিশেষে, পিকেকে-র বিলুপ্তি এবং এর পরবর্তী পরিস্থিতি তুরস্কের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে। এর সাফল্য নির্ভর করবে গণতান্ত্রিক সংস্কার, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার বৃদ্ধি, নাগরিক স্বাধীনতা সুরক্ষা এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2019 News 52 Bangla
Theme Customized BY RASHA IT