যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মীদের ছাঁটাইকরণ: স্বচ্ছতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মীর সংখ্যা কমানোর একটি প্রচেষ্টা বর্তমানে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও এলন মাস্কের ‘সরকারি কার্যকারিতা বিভাগ’ (Department of Government Efficiency) এর মাধ্যমে এই কর্মী ছাঁটাই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে স্বচ্ছতার অভাব এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন মহল থেকে একে স্বেচ্ছাচারী ও জনস্বার্থবিরোধী হিসেবেও উল্লেখ করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘পার্টনারশিপ ফর পাবলিক সার্ভিস’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ম্যাক্স স্টিয়ার একে ‘সরকারি সম্পদের ধ্বংস’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার মতে, সরকার যদি জনকল্যাণের পরিবর্তে ব্যক্তিগত স্বার্থের দিকে দৃষ্টি দেয়, তবে তা উদ্বেগের কারণ। তিনি আরো বলেন, কর্মীদের ছাঁটাইয়ের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই এবং এটি অনেকটা ‘রেডি, এম, ফায়ার’ (Ready, Aim, Fire) -এর পরিবর্তে ‘ফায়ার, ফায়ার, ফায়ার’ (Fire, Fire, Fire) -এর মতো চলছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারের এই ধরনের পদক্ষেপ দেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ, এতে দুর্নীতি ও অযোগ্যতা বাড়তে পারে। অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে, যার ফলস্বরূপ ১৮৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেমস গারফিল্ডের হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটেছিল। এর পরেই মূলত একটি অরাজনৈতিক, মেধা-ভিত্তিক সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। কিন্তু বর্তমানে এই ব্যবস্থার দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে, যা দীর্ঘ ১৪০ বছর ধরে ভালোভাবেই চলে আসছিল।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য বলছেন, তিনি একটি মেধা-ভিত্তিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাইছেন, যা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এই প্রসঙ্গে, কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণ হিসেবে ডাইভারসিটি, ইক্যুইটি ও ইনক্লুশন (DEI) প্রোগ্রাম বাতিলের কথা বলা হলেও, ম্যাক্স স্টিয়ার মনে করেন, এর সঙ্গে সরকারের বর্তমান পদক্ষেপের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, মূলত যারা নতুন কর্মী, সেই প্রবেশনারি কর্মীদেরকে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই ছাঁটাই করা হচ্ছে। এমনকি, সরকারি কাজে অপচয়, দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে কাজ করা ইন্সপেক্টর জেনারেলদেরও বরখাস্ত করা হচ্ছে।
আলোচনায় এসেছে এলন মাস্কের নামও। টেসলা (Tesla) ও স্পেসএক্স (SpaceX)-এর মতো প্রতিষ্ঠানের মালিক এলন মাস্ককে সরাসরি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে, সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে একজন ব্যক্তিগত ব্যক্তির এত বেশি প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, সরকারি কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে জনস্বার্থকে সবার উপরে রাখতে হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে সরকারের অনেক ক্ষতি হতে পারে। কারণ, এতে অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত ব্যক্তিদের পুনর্বহাল করতে হয়, যা অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা তৈরি করে। এছাড়াও, নতুন কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও নিয়োগের জন্য যে অর্থ খরচ হয়, তা নষ্ট হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন নতুন কর্মীকে নিয়োগ, প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুত করতে প্রায় ৫০০০ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ লক্ষ টাকার বেশি) খরচ হয়।
মোটকথা, সরকারি কার্যকারিতা বৃদ্ধির নামে কর্মী ছাঁটাইয়ের এই প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছতার অভাব এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের এই ধরনের পদক্ষেপ দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন