যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবাদ কর্মসূচি: ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি ও সংবিধানের প্রশ্ন
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হওয়া প্রতিবাদ কর্মসূচিগুলোর ওপর কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “অবৈধ প্রতিবাদ” সমর্থন করলে ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে সকল প্রকারের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এমনকি বিক্ষোভকারীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো অথবা কারারুদ্ধ করারও হুমকি দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের জেরে আমেরিকায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ঠিক কী ধরনের প্রতিবাদকে তিনি “অবৈধ” বলছেন? হোয়াইট হাউস স্পষ্ট করে কিছু না জানালেও, এমন হুঁশিয়ারি মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সমালোচকদের মতে, ট্রাম্পের এই ধরনের হুমকি জনগণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে পারে এবং এর ফলে প্রতিবাদকারীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণভাবে একত্রিত হওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে। দেশটির সংবিধানে প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী, প্রত্যেক নাগরিককে ধর্ম, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণভাবে একত্রিত হওয়ার এবং সরকারের কাছে অভিযোগ জানানোর অধিকার দেওয়া হয়েছে। যুগ যুগ ধরে আদালতগুলোও এই অধিকারের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে, এই অধিকারগুলো সীমাহীন নয়।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবাদের একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থেকে শুরু করে নাগরিক অধিকার আন্দোলন—বিভিন্ন সময়ে অধিকার আদায়ের জন্য মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন কিছু ঘটনাও রয়েছে, যখন প্রতিবাদের অধিকারকে সীমিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। গৃহযুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন “অবিশ্বস্ত” ব্যক্তিদের জন্য হ্যাবিয়াস কর্পাস স্থগিত করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সরকার এবং সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে “বিদ্রূপাত্মক” মন্তব্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারির সঙ্গে অনেকেই তুলনা করছেন, অতীতে তিনি বিক্ষোভকারীদের প্রতি যে মনোভাব দেখিয়েছেন, তার সঙ্গে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে শ্বেত হাউস সংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর প্রস্তাব করেছিলেন তিনি।
তবে, ট্রাম্পের এই বক্তব্য কতটা কার্যকর হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ, “অবৈধ প্রতিবাদ”-এর সংজ্ঞা তিনি নির্দিষ্ট করেননি। এমন পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীকে তার সম্ভাব্য দেশত্যাগের হুমকির বিরুদ্ধে আদালতে যেতে হয়েছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মানুষ এখনো শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটির ৮৪ শতাংশ মানুষ মনে করে শান্তিপূর্ণভাবে একত্রিত হওয়ার অধিকার খুবই জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন