আসন্ন ১৩ ও ১৪ মার্চ তারিখে রাতের আকাশে দেখা যাবে এক বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য। এই সময়ে একটি পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ ঘটবে, যা “রক্তিম চাঁদ” নামে পরিচিত। উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার আকাশে এই গ্রহণ ভালোভাবে দেখা গেলেও, বাংলাদেশ থেকেও এটি দেখার সুযোগ রয়েছে।
চন্দ্রগ্রহণ একটি স্বাভাবিক ঘটনা, যখন চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য একই সরলরেখায় আসে। এসময় পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়ে এবং সূর্যের আলোকরশ্মি বাধা পায়। এই ঘটনার ফলে চাঁদের উজ্জ্বলতা কমে যায় এবং এটি ধীরে ধীরে লালচে বর্ণ ধারণ করে। বিজ্ঞানীরা একে ‘টোটাল লুনার এক্লিপ্স’ বা পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ বলে থাকেন।
এই গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হবে বাংলাদেশ সময় ১৪ মার্চ ভোর ৪টা ৫৭ মিনিটে, যখন চাঁদ ধীরে ধীরে পৃথিবীর ছায়ায় প্রবেশ করতে শুরু করবে। গ্রহণের সর্বোচ্চ পর্যায় বা পূর্ণ গ্রহণ শুরু হবে ভোর ৬টা ২৬ মিনিটে এবং তা প্রায় ৬৫ মিনিট স্থায়ী হবে। এসময় চাঁদের রং সবচেয়ে উজ্জ্বল লাল দেখাবে। এরপর ধীরে ধীরে গ্রহণ শেষ হয়ে যাবে সকাল ৮টা ৩১ মিনিটের দিকে।
আসলে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে আসা সূর্যের আলোকরশ্মি প্রতিসরণের কারণে চাঁদের এই লালচে বর্ণ দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়াকে ‘র্যালে স্ক্যাটারিং’ বলে থাকেন। অনেকটা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় যেমন আলোকমণ্ডলের সৃষ্টি হয়, তেমনই ঘটনা ঘটে গ্রহণের সময়।
এই চন্দ্রগ্রহণ খালি চোখে দেখা সম্পূর্ণ নিরাপদ। অন্ধকার ও মেঘমুক্ত আকাশে একটি পরিষ্কার জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলে, কোনো রকম সুরক্ষা চশমা ছাড়াই এটি উপভোগ করা যাবে। তবে শহরের আলো থেকে দূরে থাকলে ভালো হয়, কারণ এতে রাতের আকাশের দৃশ্য আরও ভালোভাবে দেখা যায়।
যদি আকাশ মেঘলা থাকে, তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। টাইমঅ্যান্ডডেট.কম (TimeandDate.com) নামক ওয়েবসাইটে গ্রহণ চলাকালীন সময়ে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে, যা বাংলাদেশ সময় ১৪ মার্চ সকাল ১১টায় শুরু হবে।
এই ‘রক্তিম চাঁদ’-এর আকর্ষণ যদি আপনাকে মহাকাশের প্রতি আরও আগ্রহী করে তোলে, তাহলে আপনার জন্য আরও একটি সুখবর আছে। আগামী ৭ই সেপ্টেম্বর তারিখে এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের আকাশে আরও একটি পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। এছাড়া, আমেরিকার আকাশে মার্চ ২০২৬ সালে আবার এমন একটি বিরল দৃশ্য দেখা যাবে।
আশা করা যায়, এই মহাজাগতিক ঘটনা বাংলাদেশের মানুষের মনে বিজ্ঞান ও মহাকাশ সম্পর্কে আগ্রহ আরও বাড়াবে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার