ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে, একদিকে যেমন রাশিয়া তাদের কৌশল পরিবর্তন করছে, তেমনি পশ্চিমা বিশ্বও তাদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি, ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী কুর্স্ক অঞ্চলে রাশিয়ার আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার আটটি গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কিয়েভ সরকার।
সামরিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, রাশিয়ার সেনারা কুর্স্ক অঞ্চলে তাদের অভিযান জোরদার করেছে। এই পরিস্থিতিতে, সুমি অঞ্চলের সামরিক প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এলাকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায়” আটটি গ্রাম থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রাশিয়া ইতোমধ্যেই কুর্স্ক অঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, যা ইউক্রেনের জন্য উদ্বেগের কারণ।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবের প্রতি নীতিগত সমর্থন জানালেও, এর বিস্তারিত শর্ত নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে। পুতিন বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের সঙ্গে একমত, তবে এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু প্রশ্ন রয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, এই চুক্তিতে সংঘাতের মূল কারণগুলোও বিবেচনা করতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোতে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন। ট্রাম্পের মতে, রাশিয়া যদি যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হয়, তবে তা হবে বিশ্ববাসীর জন্য হতাশাজনক।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অবশ্য পুতিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে সন্দিহান। তিনি মনে করেন, পুতিন সম্ভবত এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তবে ট্রাম্পকে জানাতে ভয় পাচ্ছেন। জেলেনস্কির মতে, মস্কো চাইছে এমন কিছু শর্ত চাপাতে, যা হয় যুদ্ধবিরতিকে অসম্ভব করে তুলবে, নয়তো এটিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থগিত করে দেবে।
যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। ব্রিটেন ইউক্রেনকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করার জন্য তাদের ঋণ সহায়তা ২ বিলিয়ন পাউন্ড বৃদ্ধি করেছে। কানাডা জি-৭ দেশগুলোকে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া, সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানও পুতিনের সঙ্গে কথা বলে আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন।
যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ওপরও এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। একটি নতুন গবেষণা অনুযায়ী, গত বছর রাশিয়ার হামলায় ধ্বংস হওয়া কাখোভকা বাঁধের কারণে ৮৩,০০০ টন ভারী ধাতু, যার মধ্যে সীসা, ক্যাডমিয়াম ও নিকেল রয়েছে, তা উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। এই ঘটনা পরিবেশের জন্য একটি ‘বিষাক্ত টাইমবোমা’ তৈরি করেছে।
জার্মানির সরকারও তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। দেশটির পার্লামেন্ট অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের জন্য ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর একটি তহবিল তৈরির বিষয়ে আলোচনা করছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান