ভুটানের নতুন বিমানবন্দর: একটি ‘অনুভূতিপূর্ণ শহর’-এর স্বপ্ন
ভুটান, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীবনযাত্রার বিশেষ ধরনের ধারণার জন্য সুপরিচিত, সেখানে এখন একটি নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই বিমানবন্দরের মাধ্যমে দেশটি তাদের পর্যটন শিল্পকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। ভুটানের দক্ষিণাঞ্চলে, ভারতের সীমান্তবর্তী গেলেইফু শহরে এই বিমানবন্দরটি তৈরি করা হবে। এটি শুধু একটি বিমানবন্দরই নয়, বরং একটি বৃহত্তর প্রকল্পের অংশ, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘গেলেইফু অনুভূতিপূর্ণ শহর’।
বিমানবন্দরটির নকশা তৈরি করেছে বিশ্বখ্যাত স্থাপত্য সংস্থা Bjarke Ingels Group। নকশা অনুযায়ী, বিমানবন্দরটিতে কাঠের তৈরি ত্রিকোণাকার কাঠামো ব্যবহার করা হবে, যা ভবিষ্যতের প্রয়োজন অনুযায়ী সহজেই পরিবর্তন বা সম্প্রসারণ করা যাবে। বিমানবন্দরের ডিজাইন তৈরি করার সময় ভুটানের ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’ বা ‘মোট জাতীয় সুখ’-এর ধারণাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ধারণায় মানুষের সামগ্রিক জীবনযাত্রার মানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিমানবন্দরের নকশায় প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে, ভুটানে বিদেশি পর্যটকদের জন্য একমাত্র বিমানবন্দরটি হলো পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তবে, পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এই বিমানবন্দরের কার্যকারিতা কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। গেলেইফু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এই সমস্যাগুলো দূর করবে। নতুন এই বিমানবন্দরটিতে অপেক্ষাকৃত বড় রানওয়ে তৈরি করা সম্ভব হবে, যা বড় আকারের বিমান চলাচলে সহায়তা করবে। এর ফলে, ভুটানে আরও বেশি সংখ্যক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করতে পারবে।
গেলেইফু বিমানবন্দরের অবস্থান কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভারতের কাছাকাছি হওয়ায় সড়ক ও রেলপথে দেশটির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা সহজ হবে। ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক এই গেলেইফু ‘অনুভূতিপূর্ণ শহর’ প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা। রাজার মতে, এই বিমানবন্দরটি ভুটানের জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নতুন বিমানবন্দরটি বছরে প্রায় ১৩ লক্ষ যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা রাখবে এবং প্রতিদিন ১২৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হবে। যদিও এটি লন্ডন হিথ্রো বা নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরের মতো বিশাল নয়, তবে ভুটানের জন্য এটি একটি বড় পদক্ষেপ। ২০১৯ সালে ভুটানে প্রায় ৩ লক্ষ ১৬ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটেছিল।
ভুটান ‘উচ্চ মূল্য, কম প্রভাব’ (high value, low impact) সম্পন্ন পর্যটনের ধারণার সঙ্গে পরিচিত। এখানে ভ্রমণ করতে আসা পর্যটকদের প্রতিদিন ১০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১,০০০ টাকা) টেকসই উন্নয়ন ফি দিতে হয়। এই অর্থ ভুটানের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা হয়।
গেলেইফু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কবে চালু হবে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। তবে, এটি চালু হলে ভুটানের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং পর্যটকদের জন্য দেশটি ভ্রমণের আরও আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন