মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবিও সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম রাসুল এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘আর গ্রহণযোগ্য নন’।
শুক্রবার (আজ) এক টুইট বার্তায় রুবিও এই মন্তব্য করেন। এর ফলে কার্যত রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
মার্কিন সিনেটর রুবিও তার বার্তায় রাষ্ট্রদূত রাসুলকে ‘বর্ণবিদ্বেষী রাজনীতিবিদ’ এবং ‘আমেরিকা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘৃণা করেন এমন ব্যক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
রুবিও সরাসরি বলেন, “তাঁর সঙ্গে আমাদের আলোচনার কিছু নেই, তাই তাঁকে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।”
এই ঘটনার সূত্রপাত হয় রাষ্ট্রদূতের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে।
শুক্রবার এক ওয়েবিনারে রাসুল বক্তব্য দেন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গদের সংখ্যালঘুতে পরিণত হওয়া নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি এলন মাস্কের ইউরোপের কট্টর-ডানপন্থী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের সমালোচনা করেন এবং একে শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন হিসেবে উল্লেখ করেন।
ইব্রাহিম রাসুল এক সময়ের বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের কর্মী ছিলেন এবং এর জন্য তিনি কারাগারেও ছিলেন।
তিনি নেলসন ম্যান্ডেলার দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে (ANC) যোগ দেন এবং পরবর্তীতে রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত হন।
রাষ্ট্রদূত বহিষ্কারের মতো ঘটনা সাধারণত বিরল।
তবে, নিম্নপদস্থ কর্মকর্তাদের ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’ ঘোষণার ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটে থাকে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে রুবিও’র এই পদক্ষেপকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং উভয় পক্ষকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে চলমান উত্তেজনার সর্বশেষ উদাহরণ।
এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলে দেশটির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য বন্ধ করে দেন।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প আরও একধাপ এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষকদের যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের প্রস্তাব দেন।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি অংশ প্রায়ই দেশটির ভূমি সংস্কার নীতির সমালোচনা করে থাকে।
এই নীতি অনুযায়ী, ঐতিহাসিক বৈষম্য দূর করতে শ্বেতাঙ্গদের কাছ থেকে জমি নিয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বিতরণ করার কথা বলা হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানরা ১৬৫২ সাল থেকে ডাচ উপনিবেশ স্থাপন শুরু করে।
দেশটির জনসংখ্যার মাত্র ৭% শ্বেতাঙ্গ, যেখানে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৮১%।
গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা জানান, ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ‘সুন্দর’ আলোচনা হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে সম্পর্ক ‘কিছুটা খারাপের দিকে’ যায়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান