সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানো পাখি শঙ্খচিল বা গাঙচিলের খাবার-দাবারের ধরন অনেকের কাছেই বেশ কৌতূহলের বিষয়।
এরা যে মানুষের ফেলে দেওয়া খাবার খায়, বিশেষ করে পর্যটকদের কাছ থেকে খাবার কেড়ে নেওয়ার ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়, তা অনেকেরই জানা।
কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় গাঙচিলের খাদ্যতালিকা সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে, যা শুনলে হয়তো অনেকেরই চোখ কপালে উঠবে।
জানা গেছে, এরা বিভিন্ন ধরনের খাবার তো খায়ই, এমনকি তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ইঁদুর, সিল মাছের দুধের মতো জিনিসও!
যুক্তরাজ্যের সালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তুবিদ ড. অ্যালিস রাইসলি এই গবেষণাটি করেছেন।
“গালস ইটিং স্টাফ” (Gulls Eating Stuff) নামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে গাঙচিলের খাবার খাওয়ার ছবি চেয়ে পাঠান।
বিশ্বজুড়ে সংগৃহীত ছবিগুলোতে গাঙচিলের বিচিত্র খাদ্যভ্যাস ধরা পড়েছে।
স্যান্ডউইচ থেকে শুরু করে পেস্ট্রি, তারা যেন কিছুই বাদ রাখে না।
এমনকি শামুক, ঝিনুক, ছোট পাখির ছানা থেকে শুরু করে ইঁদুর পর্যন্ত তাদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে!
একজন তো গাঙচিলের ইঁদুর খাওয়ার ছবিও জমা দিয়েছেন।
গবেষক ড. রাইসলি গাঙচিলের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চান।
তিনি জানান, কিছু গাঙচিলকে সিল মাছের দুধ পান করতেও দেখা গেছে।
দক্ষিণ আমেরিকাতে গাঙচিলের একটি প্রজাতি ঘুমন্ত তিমি মাছের মাংস খাওয়ার মতো ভয়ঙ্কর কাজ করে থাকে।
গাঙচিলের এই ধরনের খাদ্যাভ্যাস তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার প্রমাণ।
ড. রাইসলি আরও বলেন, “গাঙচিল খুব সহজেই তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে।
তারা উপকূলীয় এলাকা থেকে ধীরে ধীরে জনবহুল শহরে চলে আসছে।
এর কারণ হলো, মানুষের কাছাকাছি থাকলে তাদের খাবার পাওয়া সহজ হয়।
যদিও প্রাকৃতিক পরিবেশে গাঙচিলের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, তবে শহরাঞ্চলে তাদের জীবনযাত্রা কেমন, সে সম্পর্কে এখনো তেমন একটা ধারণা পাওয়া যায়নি।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে গবেষকরা গাঙচিলের খাদ্যতালিকা পর্যবেক্ষণ করে তাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, গাঙচিল মানুষের ফেলে দেওয়া খাবার খেতে পছন্দ করলেও, তারা মূলত শিকারি প্রাণী।
তাদের প্রধান খাদ্য হলো কেঁচো।
এছাড়াও তারা ছোট পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীও শিকার করে।
ড. রাইসলি বলেন, “আমরা আশা করছি, এই গবেষণা থেকে মানুষ জানতে পারবে যে গাঙচিল কেবল আবর্জনা ভক্ষণকারী প্রাণী নয়, বরং তারা স্বাভাবিক বন্য প্রাণীর মতোই আচরণ করে।”
গাঙচিলের খাদ্যাভ্যাসের ওপর চালানো এই গবেষণা প্রমাণ করে, পরিবেশ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাখিদের জীবনযাত্রায়ও পরিবর্তন আসে।
“গালস ইটিং স্টাফ” প্রকল্পের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে গবেষকরা গাঙচিলের খাদ্যগ্রহণের ধরন এবং এর কারণগুলো আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান