কিউবার জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড সম্পূর্ণভাবে বিকল হয়ে যাওয়ায় দেশটির রাজধানী হাভানা সহ বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ব্ল্যাকআউট বা বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার রাতের এই ঘটনার ফলে দেশটির প্রায় এক কোটি মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানা যায়, স্থানীয় সময় রাত ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে রাজধানী হাভানার একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র বিকল হয়ে যায়।
এর ফলে হাভানা এবং কিউবার পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
এর ফলস্বরূপ পুরো জাতীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, যা ‘এস ই এন’ নামে পরিচিত, সেটিও ভেঙে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হাভানার সমুদ্রতীরবর্তী এলাকার আকাশে তখন ছিল ঘোর অন্ধকার।
শুধুমাত্র কয়েকটি টুরিস্ট হোটেলে জেনারেটরের মাধ্যমে সীমিত আকারে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু ছিল।
রাজধানী থেকে দূরে পূর্বাঞ্চলীয় ও পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভিন্ন প্রদেশ থেকেও একই ধরনের ব্ল্যাকআউটের খবর পাওয়া গেছে।
এতে ধারণা করা হচ্ছে, এক কোটি মানুষের এই দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে ব্যাপক হারে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
শুধু তাই নয়, ইন্টারনেট পরিষেবাতেও এর প্রভাব পড়েছে।
গুয়ান্তানামো, আর্টেমিজা, সান্টিয়াগো দে কিউবা এবং সান্তা ক্লারা প্রদেশের বাসিন্দারাও ব্ল্যাকআউটের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে, যেখানে মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ক্ষীণ আলো দেখা যাচ্ছিল।
দেশটির বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছে, তারা “বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছে”।
এর আগে, দেশটির বিদ্যুৎ সংস্থা তাদের দৈনিক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা থাকবে প্রায় ৩,২৫০ মেগাওয়াট এবং ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় ১,৩৮০ মেগাওয়াট।
অর্থাৎ, জাতীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থার প্রায় ৪২ শতাংশই বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
যদিও এটি সাম্প্রতিক সময়ের সর্বোচ্চ ঘাটতি নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত জ্বালানি সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কিউবার দুর্বল ও পুরাতন বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত বছরও দেশজুড়ে ব্ল্যাকআউটের ঘটনা ঘটেছিল।
বর্তমানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে লোডশেডিং সেখানে নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
দেশটির অনেক অঞ্চলে রান্নার কাজ এবং পানি উত্তোলনের জন্য বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করতে হয়।
খাদ্য, ওষুধ এবং পানির তীব্র সংকটের কারণে কিউবার মানুষের জীবনযাত্রা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেকর্ড সংখ্যক কিউবান নাগরিক দেশ ছেড়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং তারা জানিয়েছে, এ বছরই বেশ কয়েকটি কেন্দ্র চালু করা হবে।
এর আগে ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৪ সালেও ব্ল্যাকআউটের কারণে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ দেখা গিয়েছিল।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান